প্রকাশিত:
২২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:২৫
ময়মনসিংহে কৃষকের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে দাম কম হলেও 'নগরের' শহর বাজার গুলোতে পৌঁছাতে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কৃষকের কাছ থেকে কয়েক হাতবদল হয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে দাম দ্বিগুণ-তিন গুণ হয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে কৃষক,পাইকার আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরানগঞ্জের অম্বিকাগঞ্জ বাজারে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে বেগুনের কেজি ৬০, আলুর কেজি ৬০, পটল ৫০, লাউয়ের পিস ৩০, কচুরমুখি ৪০, করলা ৬০, কাঁকরোল ৫০, পেঁপে ২০, শসা ৮০, ঢ্যাঁড়স ৪০ ও শিম ১০০ টাকায় মোলার আটি ১০ টাকা, ডাটা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সবজি পরানগঞ্জের হাটে কৃষকরা বিক্রি করছেন আরও কম দামে। এই হাটে কৃষকদের কাছ থেকে কমদামে কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পরে ওখান থেকে নগরীর শহরের বাজারে আসতেই দাম তিন থেকে চারগুণ হয়ে যাচ্ছে। অথচ ময়মনসিংহ শহর থেকে জেল খানার ঘাট দূরত্ব প্রায় ১ কিঃ আর পরানগঞ্জের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। মাত্র এতটুকু দূরত্বে সবজির দাম হয়ে যাওয়াকে বাজার সিন্ডিকেটের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে বলছেন কৃষকরা।
কেন এই দাম বৃদ্ধি, এই প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল কাদির এক কৃষক বলেছেন, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও এজেন্ট ও স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারা তিনগুণ থেকে চার গুণ দামে তরুতরকারি বিক্রি করছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী হাসেম মিয়া জানিয়েছেন, বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর শীতকালীন সবজির ক্ষেত কয়েক বার নষ্ট হয়েছে। সে কারণে উৎপাদন একেবারেই কম হচ্ছে এবং সরবরাহ কমেছে, আর সরবরাহ কম থাকায় বাজারে দ্বিগুন দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজিতে।
ময়মনসিংহ সদরের বোররচর ইউনিয়নের রাঘবপুর, টুমপাড়া ও পরানগঞ্জ, সিরতা, জেল খানার চর, বেগুন বাড়ি, চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন কৃষি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, যেসব আবাদি জমিতে সবজি থাকার কথা সেখানে ফলন নেই। যেসব জমিতে কিছু থাকার কথা সেগুলোতেও অনেক কম। চাষিরা বলছেন, বেশ কয়েক দফা টানা বৃষ্টির কারণে সবজির জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে খরচ ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন বর্তমানে কৃষকরা।
ছাতিয়ানতলা এলাকার কৃষক রাজ মামুদ বলেন, তিন কাঠা জমিতে টমেটো লাগিয়েছিলাম। লাগাতার বৃষ্টি দুদিন পর পর উঠানো যেতো। কিন্তু বৃষ্টির পর সেই গাছে এখন আর এক কেজিও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ২০ হাজার টাকা তুলতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
একই গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ বছর শীতকালীন আগাম সবজি করে তিন লাখ টাকা আয়ের টার্গেট ছিল। কিন্তু একাধারে বৃষ্টিতে প্রথম দফায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এরপর এক বিঘা জমিতে লাগাই করল। একটাকাও বিক্রি করতে পাইছি না। করলা ক্ষেতে প্রথমবারেই লাগে ২০ হাজার টাকার বেশি। এ ছাড়া কীটনাশক, সার মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক জাতের বীজ দুবার রোপণ করে অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছি। এরপর যখন বাজারে সবজি নিয়ে যাই, কেজিতে দাম পড়ে ৩০/৪০ টাকা। অথচ ৪০ টাকার করলা বাজারে ১০০ টাকায় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। অথচ কষ্ট করে সবজি চাষ করে চালানও তুলতে পারছি না আমরা।’
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা হাটে গিয়ে সরাসরি বাইরের ব্যাপারীদের কাছে সবজি বিক্রি করতে পারছি না। স্থানীয় পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে কেনেন অল্প দামে। এরপর তারা জায়গায় কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আমাদের সবজির মণপ্রতি ৩/৪ কেজি বেশি দিতে হয়। আসলে আমরা পদে পদে ঠকছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে এবার ময়মনসিংহে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে। তবে ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে।
মন্তব্য করুন: