প্রকাশিত:
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৭
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শাহজালাল হলের একটি হল মিটিংয়ে আসাকে কেন্দ্র করে চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থীর নাম অনুপ পাল এবং সে বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জন হলেন, ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম পলাশ এবং সানজান ইসলাম মুন্না, পশুপালন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম-উল-ইসলাম এবং জাকারিয়া সাঈদ। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুপ প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে অভিযোগ পত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম।
অভিযোগপত্রে অনুপ পাল উল্লেখ করেছেন, 'গত ২৮ তারিখ রাতে শাহজালাল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রভোস্ট স্যারের উপস্থিতিতে হলের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য একটা সাধারন মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। উক্ত মিটিংয়ে একই হলের ছাত্র সাইফুল ইসলাম পলাশ অজানা কারনে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে যেতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তার নিষেধ অমান্য করে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিটিংয়ে গেলে প্রাক্তন ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম-উল-ইসলামকে নিয়ে পলাশ ও তার সহপাঠীরা আমাকে এবং আমার সহপাঠীদের নানাভাবে হেনস্থা করে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রাক্তন ছাত্রলীগকর্মী ফাহিম-উল-ইসলাম, সাইফুল ইসলাম পলাশ, জাকারিয়া সাঈদ ও সানজান ইসলাম মুন্না বেশ কয়েকজন আমার নিজ কক্ষ ২০১/ওক তে প্রবেশ করে আমাকে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি দিতে থাকে। পরবর্তীতে অন্যান্য সহপাঠীরা বাধা দিলে তারা সেখান থেকে চলে যায় এবং আমাকে হিন্দু ধর্মের হওয়ায় সংখ্যালঘু ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। প্রশাসনের নিকট আমি এর বিচার এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই।'
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফাহিম-উল-ইসলাম বলেন, 'আমি তার গায়ে কোনো ধরনের হাত তুলিনি। তার সঙ্গে তর্ক হয়েছিলো কেবল, কিন্তু গায়ে হাত তোলা হয়নি। আর আমাদের হলে দ্বিতীয় বর্ষে জোর করে সবাইকে ছাত্রলীগে রাখা হতো এবং আমাকে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে নির্যাতনও করা হয়েছিল। তাছাড়া সে সামনে রাজনীতি করতে ইচ্ছুক। ওর বাঁধা হতে পারি ভেবে আমাদের নামে সে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।'
অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, 'আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেও অভিযোগ দিতে পারে।'
বিষয়টি নিয়ে সানজান ইসলাম মুন্না বলেন, 'ওই রাতে ব্যাচমেটদের মিটিং এর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছিল। তবে মারধর হয়নি কারো উপরে।অথচ তার বিরুদ্ধে অভিযোগই আছে, সে আগে ছাত্রলীগ করতো এবং জুনিয়রদের নির্যাতন করতো। কিন্তু আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলোই না।'
অভিযোগের বিষয়ে জাকারিয়া সাঈদ বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম। তবে আমি কাউকে মারধর করি নাই।‘
এদিকে ঘটনায় উপস্থিত চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জর্জ বলেন, 'প্রভোস্ট স্যার ও হলের সবার সামনে লেভেল ৪ এর শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে না আসার কারণ হিসেবে পলাশকে দায়ী করে অনুপ। এতে পলাশ অনুপের উপর রেগে যায়। পরে পলাশ অনুপের রুমে গেলে অনুপ তাকে 'আমাকে মারবি? মার' বলে। ঘটনার এক পর্যায়ে পলাশ অনুপকে মারতে গেলে মুন্না, ফাহিম তাকে আটকায়। আমার মনে হয় হাতাহাতির এক পর্যায়ে অনুপের মাথায় খালি একবার হাত লেগেছে। আসলে পলাশের মারতে যাওয়া উচিত হয় নাই। এছাড়া মারামারির তেমন কোন ঘটনা ঘটে নাই।'
বিষয়টি সম্পর্কে শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, 'ওই ছাত্রের অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। কিন্তু ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
এ বিষয়ে বাকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, 'আমরা তার অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করেছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
মন্তব্য করুন: