প্রকাশিত:
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৫২
চারপাশ টা বড্ড নিস্তব্ধ। মাঝেমধ্যেই গাছের পাতাগুলো নরম ছোঁয়ায় শরীর বুলিয়ে শীতের আবরণ দিয়ে জানান দিচ্ছে শীতের আগমণ, সন্ধ্যার মায়াবতী রুপ নামার আহ্বান।
পদ্মার নদীর জোয়ারের ডাক যেন কত গল্প জমা হয়ে গেছে সেই গল্পের আসড় বসানোর জন্য যেন পদ্মা কারো জন্য অপেক্ষারত রয়েছে কয়েককাল। কাশফুলগুলো সাদা শাড়ি পড়ে দুই পাড়ে অনবরত নৃত্য করছে। মাথাগুলো যেন মেঠোপথ থেকে উঁচু হয়ে জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্ব। সেই কাঁদা মেঠো পথ দিয়ে নিশ্চুপে এসে কেউ যেন জায়গা খুজঁছে নিজের আশ্রয়ের জন্য। হলুদ পান্জাবিতে মোড়ানো সারা শরীর গায়ে পাতলা নীল চাদরে আবৃত লম্বাচওড়া দেহটা। চুলগুলো এলোমেলো। হালকা বাতাসের ঝাপটায় দুলছে হাতে একটা ডায়েরি। পদ্মার পাড়েঁ দাঁড়াতেই যেন পদ্মার পানির জোয়ার আরো বেড়ে গেছে যেন অতিথি কে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত। আকাশে কলঙ্ক আবৃত একটা চাঁদের ক্ষীণ আলো সেউ পানিতে পড়ছে এবং পুরো আকাশ জুড়ে একটি মাত্র তারা সেউ তারাটা যেন চাঁদের সঙ্গী নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্যই বন্ধুত্বপরায়ণ। নদীর ওপার পাড়ে চারটি কৃত্রিম আলো পদ্মা কে জড়িয়ে নিয়েছে মৃদুস্বরে জীববৈচিত্র্যর কল্পকাহিনীতে। বাতাসের শিশি শব্দ, নদীর কল কল ধ্বনি, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তার মধ্যেই কানে বাজছে নুপুরের ঝুমঝুম আওয়াজ, চুলের কোপায় ছাতিমফুল গোঁজা, চারপাশ টা ছাতিম ফুলের গন্ধে উন্মাদ। লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে কাচের চুরির বাহার কপালে লাল টিপ দূর থেকে মনে হচ্ছে কোনো অপ্সরা। গুটি পা কয়েক দূর থেকে একটা কোমল কণ্ঠ থেকে ভেসে আসলো --- অরবিন্দ তুমি এসেছো?
নিরুপমা আমি কতকাল এই নদীরপাড়ে জপমালা জপেছি যেন তোমাকে দেখতে পাই । শ্রেষ্ঠ লীলার আবরণে প্রকৃতির ভীড়ে তোমাকে পাবো সেতো ভাবিনি।
ক্ষণকাল স্তব্ধ নিরুপমাকে অরবিন্দ হলুদ পাঞ্জাবি আর কাব্যিক অভ্যর্থনা কোনোটাই যেন স্পর্শ করলনা। কত বিমর্ষ অন্য মনস্ক মন উদাস হয়ে আছে। সে যেন অন্য কিছু চাচ্ছে।
হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো___ কেমন আছো অরবিন্দ?
_আমি ভালো না থেকে পারি। তুমি কেমন আছো নিরু?
_আমি বড্ড ক্লান্ত আমি নীড় খুঁজি শান্ত নদী হয়ে থাকতে।
ক্ষনকালীন স্তব্ধ সবকিছু...
অরবিন্দ তুমি আমাকে ভালোবাসলেনা কেন?
_সে তো অনেক হিসাব। তুমি শুনতে চাও নিরু।
_ চোখের পলক তুলে গভীর দৃষ্টি দিয়ে জিগাইলো _
অরবিন্দ তুমি আমাকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হত?
তুমি আমাকে ভালবাসলে মহাবিশ্বের ধ্বংস হয়ে যেত?
পৃথিবী বিলুপ্ত হয়ে যেত?
মহামারি গ্রাস করতো বিশ্বকে। নিরুপমার চোখ ক্লান্ত। ঠোঁট কেঁপে কেপেঁ কথাগুলো বেড়িয়ে আসছে হৃদয় স্পন্দন করে। গায়ে শিহরণ জাগাচ্ছে। নিরুর মনে কত ক্ষোভ কত অভিযোগ জমা হয়েছে।
__ অনেক ক্ষতি হয়ে যেত নিরু। প্রকৃতি নিয়ম বদলে যেত। প্রকৃতি তো সরুপ বদলাতে পারবেনা। প্রকৃতি কে বিলুপ্ত হতে হতো। আমি প্রতি পূর্ণিমার চাঁদ না দেখে তোমাকে দেখতাম, তখনতো প্রকৃতি অভিশাপ দিতো কেন তার প্রতি বিমুখ।
__ এতটুকুই তুমি বীরপুরুষ হয়ে যোদ্ধ করতে পারতেনা।
আমাকে পাওয়ার জন্য!
__আচ্ছা নিরু।
তোমার ওই কাজল কালো চোখে যে সমুদ্রের নীল পানি ঢেউ খেলে চোখ দুটি সকল নদীর জল কে গ্রাস করে ফেলছে। আমিতো ওই চোখের দিকে তাকিয়েই সকাল সন্ধ্যার নিয়মিত রুপ উপভোগ করতে পারতামনা। হারিয়ে যেতাম ওই চোখদুটো তে। তোমার কপাল জুড়ে যে বিশ্বরাজনীতির খেলা। হাজার কবিতার অনুবাদ ঠিক চন্দ্রবিন্দু লাল টিপ কণার মতো। আমিতো সেই প্রদর্শনীতে ই ডুবে যেতাম তোমার চুলে তো সুগন্ধিতে ঢাকা আমি সেই গন্ধেি কয়েক কার মাতাল হয়ে থাকতাম। নেশাক্ত কন্ঠে বলতাম নিরু তোমাকে ভালোবাসি। তখন কি বা বুঝতে ভালোবাসার মর্ম।
নিরু বাক্যহীন সবকিছু লুকানো, লক্ষ্যহীন ওর একটাই প্রশ্ন, অভিযোগ, আফসোস অরবিন্দ কেন ভালোবাসলেনা। ঠিক ছোট্ট নির্বাক সঙ্গীর মতো সবগুলো বিশেষণ ও গ্রাস করছিলো অরবিন্দের এলোচুলের দিকে তাকিয়ে।
__ তৃতীয়বারের মতো ক্লান্ত স্বরে জিগায় -- তুমি আমাকে ভালোবাসলেনা কেন অরবিন্দ?
__ ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেয়। ভালোবাসার কথা বলতে নেয়। বললেই হারিয়ে যায় তখন সাতসমুদ্র ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না।
নিরবে কাটলো কয়েক প্রহর, আর হলোনা কথা। চাঁদের আলো ম্লান হয়ে ওই পাড়ের কৃত্রিম আলো সরে গিয়ে অন্ধকার জড়িয়ে নিলো।
_আকুলতার স্রোতে আশাবাদী আবার জিগায়
_তুমি আমাকে ভালোবাসবে অরবিন্দ।
_ভেবে দেখা যাবে।
_কত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
_তা জানিনা।
_এ জগতে আর কে জানে - জানেতো অন্তর্যামী।
_ ভুলে যাও।
_ভুলে যাওয়াইতো কঠিন।
_ মানুষকে ভুলা যায় কিন্তু স্মৃতি কে ভুলা যায়না।
_মায়ায় জড়াবেনা।
_আবার দেখা হবে তো!
_আর কিছু শুনতে চাইনা অরবিন্দ। এটা বলতে বলতে মায়াবিনী নুপুরের আওয়াজকে প্রাধান্য না দিয়েই কোন অন্ধকারে হারিয়ে গিয়ে বলতে থাকলো অরবিন্দ বিকট শব্দ করে অরবিন্দ, অরবিন্দ আবার যখন আসবে ডায়েরিটা নিয়ে আসবে।
আমি স্মৃতির মৃত্যু নিয়ে আসবো। সবটা যেন অন্ধকারে বিলীন হয়ে গেলো শুধু ক্ষীণ চাঁদের আলোতে হলুদ পাঞ্জাবির আবরণ টা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন: