শনিবার, ১৪ই জুন ২০২৫, ৩০শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শোক জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা ড. ইউনূসের
  • দুর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে সরকার
  • ‘বিদেশে সম্পদ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে বাংলাদেশ’
  • বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
  • মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪
  • তারেক রহমান চাইলেই দেশে আসতে পারেন
  • প্রধান উপদেষ্টা আজ কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন
  • পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যা জানালেন প্রেস সচিব
  • পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাজ্য
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘সহনীয়’

পর্ব-১

একদিন স্বপ্নেরও দিন

নাসরিন আক্তার

প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৫

শিক্ষা উপ-সচিব হিসেবে আজ যোগদান করেছে শাকিল আহ্মেদ। সচিবালয়ের সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। হ্যাঁ, এই দিনটা অনেক কষ্ট, অনেক সাধনার ফসল শাকিলের। চাকুরীর দশ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। এত অল্প বয়সে, এত তাড়াতাড়ি তার পদোন্নতি, সবই বিষ্ময়কর ব্যপার। শাকিলের সততা আর কর্মদক্ষতাই মূলত তার এই উন্নতির কারন। সাথে আছে তার মায়ের দোয়া এবং প্রিয় শিক্ষকদের স্নেহময় প্রার্থনা।

সবাই চলে যাওয়ার পর, শাকিল নিজের অফিস রুমে ভাবনার অতলে হারিয়ে যায়। আহা! কত বেদনাভরা ছিল তার অতীত। ছোটবেলায় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় তার রিক্সাচালক বাবা। নানার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও বেশি ভালো ছিলো না। শাকিলের বাবার পৈতৃক ভিটা, একটা বেড়ার ঘর এটুকুই ছিল তাদের মা-ছেলের সম্পদ। বাবার মৃত্যুর সময় শাকিলের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। বাবার মুখটাও ঠিকমত মনে করতে পারে না শাকিল। বাবার মৃত্যুর পর শুরু হয় শাকিলকে নিয়ে তার মায়ের সংগ্রামী জীবন। একটা কারখানায় চাকুরী করতেন শাকিলের মা, যা বেতন পেতেন তা দিয়ে মা-ছেলের কোন রকম দিন কেটে যেত। আস্তে আস্তে শাকিল বড় হয়। বাড়ির কাছের একটা প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয় সে।

মা তাকে যেদিন প্রথম স্কুলে নিয়ে যায়, সেদিন ভীষন ভয় পাচ্ছিলো শাকিল। মাকে ছাড়া সে কোথাও থাকেনি। এমনকি কারখানায় কাজে গেলেও তার মা তাকে সাথে করে নিয়ে যেত। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো শাকিলের। এমন সময় একজন শিক্ষক আদর করে তাকে কাছে টেনে নিল। শিক্ষকের নাম ছিলো সাইফুল ইসলাম। তরতাজা যুবক, শাকিলের প্রথম দেখাতেই মনে হচ্ছিলো তিনি যেনো তার অনেক দিনের চেনা। সাইফুল স্যারের আন্তরিক ¯েœহ, ভালোবাসার কারণে অল্প কয়েকদিরে মধ্যেই কেটে যায় শাকিলের স্কুল ভীতি। স্কুল ছুটি হলে, শাকিলের মা আসতে যদি কোনদিন দেরী হতো, সেদিন সাইফুল স্যার শাকিলকে নাস্তা খাইয়ে নিজের কাছে বসিয়ে রাখতেন। এভাবে আস্তে আস্তে উপরের ক্লাসে উঠতে থাকে শাকিল।

যখনই কোন সমস্যায় পড়তো, তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন সাইফুল স্যার। প্রায় সময় শাকিলকে খাতা, কলম কিনে দিতেন সাইফুল স্যার। বন্ধু-বান্ধবের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অভাব-দারিদ্রতার কারণে যখনই শাকিল হতাশ হয়ে যেতো, ঠিক তখনই ভরসার হাত বাড়িয়ে দিতেন সাইফুল স্যার। শাকিলের মনে পড়ে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার আগে কি আন্তরিকতা দিয়েই না সাইফুল স্যার বিনে পয়সায় শাকিলকে পড়িয়েছিলেন।  যেদিন ৫ম শ্রেণির সমাপনী বৃত্তির ফলাফলে শাকিল উপজেলায় মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছিলো সেদিন আনন্দে স্যারের চোখে টপ টপ করে অশ্রু ঝড়ে পড়ছিলো। তারপর শাকিলের নতুন শিক্ষা জীবন শুরু হয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

পড়ালেখার পাশাপাশি মাঝে মাঝে স্কুলে স্যারের সাথে দেখা করতে যেতো শাকিল। স্যার সবসময় শাকিলকে উৎসাহ দিতেন। তোকে অনেক বড় হতে হবে বাবা, তোর মায়ের দুঃখ দূর করতে হবে। আর যদি কখনও সরকারী বড় কোন কর্মকর্তা হতে পারিস, এ হতভাগ্য প্রাইমারী শিক্ষকদের কথা ভুলিস না। আমরা এখনও ৩য় শ্রেণির কর্মচারী-এটা এ জাতির জন্য বড় লজ্জার।” বলতে বলতে স্যারের গলা ভারী হয়ে আসছিলো। সাইফুল স্যারের সেদিনের কথাগুলো আজও শাকিলের মনে দাগ কেটে আছে।

শাকিল যখন জে.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট জানাতে স্যারের কাছে যায়, তখন জানতে পারে তার প্রিয় স্যার এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণে গিয়েছেন অনেক দূরের শহরে। এ কথা জেনে শাকিলের মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে সে স্কুলে স্যারের সাথে একদিন দেখা করতে যায়, কিšদ সেখানে দিয়ে সে যা শুনলো তাতে তার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিলো। কারণ, তার প্রিয় সাইফুল স্যার যে অন্য স্কুলে বদলী হয়ে গেছেন। অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে শাকিল সাইফুল স্যারের নতুন স্কুলের নাম-ঠিকানা লিখে নিয়েছিল। কিšদ এত দূরে তার মা তাকে যেতে দিতে চাইতো না। শত ব্যস্ততার মাঝে থেকেও স্যারের কথা কিছুতেই ভূলতে পারত না শাকিল।

 

সহকারী শিক্ষক, হাটহাজারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর