প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২০
নিজের অফিসে বসে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সামাজিক অবস্থান সবকিছু নিয়ে বিচার-বিশ্লেষন করছে শাকিল। না, তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি শিক্ষকদের আর্থিক, সামাজিক অবস্থানের। এই কয়েকদিনের মধ্যে শাকিল তার প্রিয় শিক্ষক সাইফুল স্যার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছে। বর্তমানে সাইফুল স্যার একজন প্রধান শিক্ষক। চাকুরীর বয়স ত্রিশ বছর। কিšদ বেতন খুব একটা বাড়েনি। স্যারের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীর সন্ধান করছে। ছোট ছেলে অণার্সে পড়ছে। মেয়েটা মেডিক্যালে পড়ছে। পরিবারের খরচ সামলাতে স্যার হিমশিম খাচ্ছেন। শাকিলের ভীষন খারাপ লাগছে। স্যারের কথাগুলো তার মনে খুব নাড়া দিচ্ছে। স্যারদের জন্য তার কিছু করতেই হবে।
যেদিন স্যারদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে তুলতে পারবে, সেদিন, হ্যাঁ ঠিক সেদিনই সে দাঁড়াবে তার শ্রদ্ধ্যেয় স্যারের সামনে। শাকিল তার ল্যাপটপটা নিয়ে বসে গুগলে সার্চ দেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে সে। তুলনা করে বাংলাদেশের শিক্ষকদের সাথে। তার শিক্ষক সাইফুল স্যার আজও ভাড়া বাসায় থাকেন। নিজের একটা বাড়ি করার মত অবস্থা আজও স্যারের হয়নি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, নিজের ও স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ সব মিলিয়ে স্যারের করুন অবস্থা। শাকিল ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকে, তাকে খুব সুন্দর একটা পরিকল্পনা করতে হবে। যাতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় সাথে সমন্বয় করে শিক্ষকদের সম্মানজনক একটা অবস্থানে আনা যায়। এ জন্য যা যা করতে হবে-
১। শিক্ষকদের ১ম শ্রেণির মর্যাদা দিতে হবে।
২। সর্বোচ্চ মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশার জন্য বাছাই এবং নিয়োগ করতে হবে
৩। শিক্ষকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। শিক্ষকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল থাকবে, সেখানে শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে চিকিৎসা হবে।
৫। বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষকদের মহাপরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকবে।
৬। বিদ্যালয়ের সময় হবে সকাল দশটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত। শিক্ষকরা যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম করে নতুন উদ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। পাঠদানের কাজ ছাড়া শিক্ষকদের অন্য কোন কাজে বাধ্যতামূলক সম্পৃক্ত করা যাবে না। তবে কেউ আগ্রহী হলে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক যে কোন কাজে সম্মানীসহ সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
৮। বিদ্যালয় পরিচালনা সরাসরি উপজেলা শিক্ষা অফিস দ্বারা হতে হবে, বাইরের কোন কমিটি থাকবে না। প্রয়োজনে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৯। খুব দ্রুত প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন আই.টিদ্ধতে দক্ষ অফিস সহকারী নিয়োগ দিতে হবে। বিদ্যালয়ের যাবতীয় অফিসিয়াল কাজ তিনিই করবেন।
আপাতত এই পরিকল্পনাগুলো যেভাবেই হোক পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতেই হবে।
সহকারী শিক্ষক, হাটহাজারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
মন্তব্য করুন: