প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২২
‘স্যার আসতে পারিদ্ধ- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর রুমে অনুমতি চাইলো শাকিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মাইনুল ইসলাম। বয়স প্রায় পঞ্চান্ন বছর। খুবই ভদ্র এবং সৎ মানুষ হিসবে সুখ্যাতি আছে। শাকিলকে খুব স্নেহ করেন তিনি। শাকিলের হাতে একটা ফাইল। মন্ত্রী মহোদয় তার স্বভাবসুলভ মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আরে শাকিল যে, এসো, এসো।
মনে হচ্ছে তুমি কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব এক্সাইটেড”। শাকিল জবাবে বলল, আসলে স্যার আমি অনেকদিন ধরে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের জন্য ফলপ্রসু কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করছি। কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এখন আমার মনে হচ্ছে সে সময় সুযোগ এসেছে। শাকিলের কথা শুনে মন্ত্রী মহোদয় বললেন, সরকার তো কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এ খাতে। অথচ দেখো তেমন একটা ফলাফল কিন্তু আমরা পচ্ছি না। এর কারন কী, তুমি বলতে পারো শাকিল? শাকিল বলল, স্যার, আমার যেটা মনে হয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের আমরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বানিয়ে রেখেছি। সামাজিকভাবে তাদের অবস্থান খুব অসম্মানজনক। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কি করে প্রথম শ্রেণির নাগরিক গড়বে? আপনিই বিচার করে দেখুন স্যার এই যে আপনি মন্ত্রী, আমি সচিব, আমাদের কিন্তু প্রথম হাতেখড়ি হয়েছে এসব নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকদের হাতেই।
অথচ তারা আজও সমাজে অবহেলিত। যতদিন এই শিক্ষকদের আমরা সঠিক মর্যাদা দিতে না পারবো, ততদিন শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়েই থাকবো বলে আমার মনে হয়। দেখেন স্যার, চাকুরীর দশ বছরে আমার অবস্থান কোথায়? অথচ অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যাদের চাকুরীর বয়স বিশ-বাইশ বছর তারা এখনও সহকারী শিক্ষক। বৃদ্ধ বয়সে এসে অনেকে প্রমোশন পান ঠিকই, কিন্তু বেতন গ্রেড তেমন একটা বাড়ে না”। শাকিল একটু থামলো, তারপর হাতের ফাইলটা মন্ত্রী মহোদয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, স্যার এখানে আমি আমার কিছু ভাবনা থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা রেখেছি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আপনি দয়া করে একটু দেখবেন স্যার? মন্ত্রী মহোদয় আগ্রহ নিয়ে ফাইলটি হাতে নিলেন, বেশ কিছুক্ষন মনোযোগ দিয়ে দেখলেন।
কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে ভাবলেন। চোখ মেলে শাকিলের দিকে সন্তুষ্ট চিত্তে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন, শাকিল তোমার চিন্তা-ভাবনা এবং প্রস্তাবনাগুলো বেশ সুন্দর, কিন্তু এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন, তা আসবে কোথা থেকে? শাকিল জানতো যে মন্ত্রী মহোদয় এরকম প্রশ্ন করবেন। তাই সে অনেকটা প্রস্তুতই ছিলো বলা চলে। সে বলল, স্যার এ ব্যাপারেও আমি একটা পরিকল্পনা করেছি, সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে পাঠবো। আপাতত শুধু এটুকু বলছি, অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতে আমরা টাকা নষ্ট করছি, সেসব অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলোর একটি তালিকা আমি তৈরী করেছি। সেগুলো বন্ধ করলে এবং আরও কিছু পরিকল্পনা করলে ইন্শাআল্লাহ আমরা সফল হবো স্যার। প্লিজ স্যার, আমার প্রস্তাবনাগুলো একটু ভেবে দেখবেন স্যার। একবার চেষ্টা করে দেখুন না স্যার, ঠকবেন না মনে হয়। জাতি গড়ার কারিগরদের সম্মানজনক অবস্থানে নিতে পারলে, আপনি দেখবেন স্যার শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আমার দৃঢ় বিশ^fস। আবেগে ভারী হয়ে আসে শাকিলের কন্ঠ। তার প্রিয় শিক্ষক সাইফুল স্যারের নিষ্পাপ মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে। যেভাবেই হোক এ প্রস্তাবনাগুলোর আলোকে পরিকল্পনা গ্রহন করে তা বাস্তবায়িত করতেই হবে।
সহকারী শিক্ষক, হাটহাজারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
মন্তব্য করুন: