প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২৮
বাবা, বাবা, আজকের পত্রিকাটা দেখেছো? তোমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় তো ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ছোট ছেলে আরিফুল ইসলামের কথায় সাইফুল স্যার চমকে উঠলেন। বিকেলের চা খেতে খেতে ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবছিলেন তিনি। এ মাসের আজ বাইশ তারিখ। হাতের টাকা পয়সা প্রায় শেষ হয়ে আসছে।
এ মাসেও মনে হয় ধার করতে হবে তাকে। এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ছেলের হাত থেকে পত্রিকাটা নিলেন। হেডলাইন-এ আছে ‘প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষায় আসছে ব্যাপক পরিবর্তনদ্ধ। মনে মনে তাচ্ছিল্লের হাসি হাসলেন। এমন বড় বড় বুলি কতই তো শুনেছেন। আর চাকুরী আছেই বা কয় বছর। ৪/৫ বছর মনে হয়। আচ্ছা তবুও দেখিনা কি আছে। সবকিছু পড়লেন। পড়ে তো বেশ ভালোই লাগলো। এখন বাস্তবায়ন কতটুকু হয় তা হচ্ছে কথা।
রাতের বেলা টিভিতেও বিভিন্ন চ্যানেলে বলছে খবরটা। হঠাৎ একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো তার। সেখানো একটা টকশো চলছিলো। আলোচনায় দেখা যাচ্ছে মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও শিক্ষা উপ-সচিবকে। শিক্ষা উপসচিব ছেলেটাকে একদম ইয়াং মনে হচ্ছে। ছেলেটাকে ভীষন চেনা চেনাও লাগছে। মনে হয় তার কোন ছাত্রের মতো। নিজে নিজে হাসলেন। আসলে এই বয়সে এসে সবাইকে নিজের ছাত্রের মতো মনে হয়। এবার তিনি টকশোর দিকে মনোযোগ দিলেন।
ছেলেটির নাম টিভি স্ত্রীনে শাকিল আহমেদ দেখাচ্ছে। তার কথাগুলো খুবই সুন্দর। মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছেন সাইফুল স্যার। সাইফুল স্মৃতিচারণ করছে তার ফেলে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। বিশেষ করে তার প্রিয় শিক্ষক সাইফুল ইসলামের কথা। যার সার্বিক সহযোগীতা উৎসাহ আর প্রেরণা শাকিলকে তার বর্তমান অবস্থানে এনেছে। এতক্ষণে সাইফুল স্যার বহু বছর আগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সেই ছোট্ট শাকিলকে চিনতে পারলেন। প্রচন্ড আবেগে তার দুদ্ধচোখ ঝাপসা হয়ে এলো। ইচ্ছে হচ্ছে আনন্দে চিৎকার করে কাঁদেন। চিৎকারহীন কান্না শুরু করেও দিলেন।
তবে এ আনন্দ দারুন সুখের, ভীষন তৃপ্তি আর গর্বের। জীবনে কত হাজার ছাত্র পড়িয়েছেন তিনি, কই কেউ সেভাবে মনে রাখেনি। সাইফুল স্যার চিৎকার করে তার স্ত্রীসন্তানদের ডাকলেন। সবাই কোথায়? দেখো, দেখো, আমার ছাত্রকে দেখাচ্ছে টিভিতে। সে এখন শিক্ষা উপসচিব। আর সে আমার কথা এখনও মনে রেখেছে”। সাইফুল স্যারের চিৎকারে পরিবারের সবাই এসে টিভির সামনে দাঁড়ালো। গর্বে সাইফুল স্যারের বুকটা ভরে উঠল।
তার সেই ছোট্ট, এতিম, মেধাবী ছাত্র শাকিল আজ কত বড় হয়েছে। শাকিল তার কথা রেখেছে। ভুলেনি সে তার স্যারকে। সাইফুল স্যার আনন্দে বার বার চোখের পানি মুছতে লাগলেন। ইন্শাআল্লাহ এবার কিছু একটা হবেই হবে, অবশ্যই হবে। তিনি বেশিদিন ভোগ করতে না পারলেও তার উত্তরসূরীরাতো এ সুবিধা পাবে। শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাবে তার প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ। নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন তিনি।
সহকারী শিক্ষক, হাটহাজারী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
মন্তব্য করুন: