প্রকাশিত:
৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯
বাংলাদেশের সীমানা জুড়ে আছে পাহাড়ের বিস্তীর্ন বনভূমি। পাহাড় হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রকৃতির অমূল্যদান। প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক সৌর্ন্দয্যবর্ধনে পাহাড়ি জনপদের রয়েছে অতুলনীয় অবদান। যে সৌন্দর্য্য মানুষের হৃদয়কে আনন্দে উদ্বেলিত করে। ১৮৬০ সালে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। ১৮৬৪ সালে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে বিভক্ত হয়। এই তিন জেলার সর্বমোট আয়তন ১৩,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। শান্তি ও স্বস্তির পরশ বুলাতে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যায় পাহাড়ি স্নিগ্ধ ছায়ায়। নদী, সাগর, পাহাড় বেষ্টিত বাংলাদেশ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম। সে পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনোভাবে অশান্ত হোক তা কারো কাম্য নয়। পাহাড় অশান্ত হলে পুরো বাংলাদেশ অশ^স্তিতে হাসফাস করে। আজ থেকে আনুমানিক পাঁচ দশক পুর্বেও তিন পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠি তাদেরকে যে নামেই বলা হোক না কেন এক সময় তারা সংখ্যায় সর্বাধিক্য ছিল।
সমতলীয় জনগোষ্ঠি ছিল অতি নগণ্য; এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেকাংশ জুড়ে সমতলীয় বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠির বসতি গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে এখন বহুত্ব জাতিসত্তার কেন্দ্রস্থল। পাহাড়ে এখন সমতলীয় তথা অবাঙ্গালি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। অথচ একসময় কল্পনাও করা যেত না। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম প্রধান দেশ হলেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে যুগ যুগ ধরে জাতি ধর্ম বর্ণ পরিচয়ের ভেদাভেদ ভুলে বসবাস করে আসছে। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত বলা চলে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সংগ্রামের বীরত্বগাথা মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির। মুক্তিযুদ্ধের সময় কে হিন্দু কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীষ্টান কিংবা কে পাহাড়ি আদিবাসী, উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী, কে সমতলীয় বাঙালি এরকম কোনো প্রশ্নবোধক ছিল না। শুধু নিজ নিজ জাতিসত্তার অস্তিত্ব মর্যাদা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যতা যারা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল সেই পাকিস্তান নামক দানবীয় দেশের বিরুদ্ধে জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ প্রসঙ্গে নির্দ্ধিধায় বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধে সকল সম্প্রদায়ের অভাবনীয় ভূমিকা ছিল বলে পাকিস্তানী সৈন্যরা সেদিন পরাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিনের অসাম্প্রদায়িক ঐক্যবদ্ধতা এখন দিন দিন যেন চিড় ধরতে শুরু করেছে। বিগত তিন দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য যেন দিনের পর দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। সেই ধারবাহিকতা এসে ঠেকেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও। সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে আহত করেছে।
এখন চলছে একবিংশ শতাব্দী, দেখা যায় ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করে স¤্রাট বাবর ভারতীয় উপমহাদেশে তাঁর রাজ্যশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে তাঁর বংশধররা একটানা ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত মুঘল শাসন পরিচালনা করেছিলেন। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পুরো শাসন চলে যায় ব্রিটিশদের অনুকূলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই দুই শাসন যদি ধরি তাহলে উভয় শাসনামলের মেয়াদ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশত বছর।
একটু ভাবুনতো, তখন কী কোন আলাদা দেশ ছিল ? না ছিল না । এই সাড়ে তিনশ বছর নয় শুধু তার সাথে যদি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শাসন যোগ করি তাহলে দাঁড়ায় পাঁচশ বছরের ওপরে। অথচ আমরা দেখি এই উপজাতি জনগোষ্ঠি তারো আগে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেছে। তাহলে বর্তমান সময়ে আমরা কীভাবে বলি তারা অন্যদেশ থেকে এসে এরা বসতি স্থাপন করেছে ? বিশ^ মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখাযায়, অঞ্চল ভেদে একেকটি এলাকা ছিল একেকজন রাজা বা স¤্রাটদের অধীনে। তারাই নিজ নিজ রাজ্য পরিচালনা করতেন। পৃথিবী জুড়ে ছিল ব্রিটিশ রাজত্ব। তাদের সা¤্রাজ্য এমন বিস্তৃত ছিল যে, প্রবাদ আছে “ব্রিটিশ রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যেতো না”। এই কথাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখা করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, বিশ্বব্যাপী কতখানি রাজত্ব ছিল ব্রিটিশদের। তখন হাজারো জাতির একদেশের নাম ছিল ব্রিটিশ।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলংকা, চীন, থাইল্যা-, মালয়েশিয়া, তিব্বত, ভুটান, লাউস, কম্বোডিয়া এমনকি সুদুঢ় অষ্ট্রেলিয়া কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যা-সহ আরো বহু দেশ জুড়ে ছিল একটি নাম ব্রিটিশ। ব্রিটিশের শাসনামল ও শাসনের পর থেকে একেকটি দেশ নাম ধারণের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে। আজকে যে সব মানুষদেরকে ভিন্ন দেশ থেকে এসে আবাস গড়ে তুলেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে, তার কোনোরকম ভিত্তি আছে বলে মনেকরি না; কারণ ব্রিটিশ কিংবা তারো আগে থেকেই হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা অন্যান্য গোত্রের মানুষরা নিজ নিজ স্থানেই বসবাস করে আসছে। ১৯৪৭ সালের পরে এসে ভাগ হয় দেশ। তারো আগে হয়তো অন্যান্য দেশও বিভক্ত হয়েছিল।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেই ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ যে নামেই বিভক্ত হোক না কেন তারা প্রত্যেকের বসবাস ছিল নিজ দেশেই। যে যে প্রান্তেই বাস করুক না কেন সবাই কিন্তু ছিল এক দেশেরই নাগরিক। অতএব, শত শত বছর পরে এসে কে কোন দেশ থেকে এসে পাহাড়, জঙ্গল, পর্বত উপত্যাকা কিংবা সমতলে বসতি স্থাপন করেছে এ জাতীয় প্রশ্ন করা আদৌ যুক্তিযুক্ত আছে কিনা আমার বোধগম্য নয়। বরঞ্চ প্রশ্ন করা উচিত কোন জনগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীবনযাপন তুলনামুলকভাবে পিছিয়ে ছিল।
আমরা যদি একটু ভাবি, চিন্তাকরি আজ থেকে পাঁচ’শ বছর আগে পাহাড়ের পরিবেশটা কেমন ছিল। অসংখ্য উঁচুনীচু, গভীর অগভীর টিলা, অসংখ্য গাছপালা, লতাপাতা, সেই সাথে ছিল নানা প্রজাতির পশুপাখির বিচরণস্থল। আজকে যাদেরকে পাহাড়ি আর সমতলীয় বলি সেই পাঁচ’শ বছর আগে সেই জনপদের পরিবেশটা তেমন একটা সুখকর ছিল না। ইতিহাস তাত্ত্বিকদের মতে, তিব্বত ও মায়ানমার থেকে মঙ্গলীয় চেহারার মানুষরা একসময় পার্বত্য তিন চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। তখন জীবনযাপন ছিল দুস্কর ও দুর্বোধ্য। তাঁরা অত্যন্ত সহজ সরল, পাহাড়ের নানা প্রজাতির লতাপাতা ফলমূল খেয়েই জীবন ধারণ করতেন। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এই তিন জেলা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করে আসছে। এই নৃগোষ্ঠির মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়। যেমন- চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, লুসাই, পাংখোয়া, বম, খেয়াং, খুমি, রাখাইন প্রমূখ জনগোষ্ঠি।
তাদের সংস্কৃতির জীবনধারা বাঙালিদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমতলের বাঙালিদের সাথে পাহাড়ি জনগোষ্ঠির খাদ্যাভ্যস কথাবার্তা চালচলন কোনোটির মিল নেই। তাদের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে জুমচাষই তাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। তারা সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। পাহাড় হচ্ছে তাদের নির্ভরতার প্রতীক। পাহাড়কে তারা মায়ের মতো ভালোবাসে পূজা করে, শ্রদ্ধা-সম্মান করে। এখন পাহাড়ের কিছু কিছু লোক লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হলেও তার সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা।
সেই শান্ত জনপদে চলতি বছর (২০২৪) সেপ্টেম্বরের ১৯, ২০ ও ১লা অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সমতলীয় বাঙালি এক যুবক মোটর সাইকেল চুরি করে পালানের সময় আটক ও টেকনিক্যাল স্কুলের জনৈক শিক্ষক কর্তৃক একাধিক উপজাতি শিক্ষার্থিকে ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে দুই দফায় তুলকালাম কা- ঘটে যায়। এর জের ধরে পাহাড়িদের বাড়িঘর দোকানপাটে হামলা, লুটপাট এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় জলজ্যান্ত হত্যার শিকার হয় চারজন উপজাতি। তাদের উপসনালয়, ধর্মপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হলো। মূর্তি ভাঙা হলো। দানবাক্সের টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেলো। প্রথম ঘটনার ক্ষত না শুকানোর আগে আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। এবার এক পাহাড়ি কন্যা ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হলো। আবার পোড়ানো হলো তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, বৌদ্ধ বিহারে রক্ষিত নির্বাক বুদ্ধমূর্তিটিও তান্ডব থেকে রেহাই পায়নি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো, ভেঙে চুরমার করলো।
এতে আমরা কি বুঝতে পারি। এর ক’দিন পর বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটন-অঘটনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা। সরকার পুজায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ঘোষনা দিলেও সে ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৩৫ টি স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর। এছাড়া আরো কতো কি যে ঘটলো তার কোনো হিসেব নাই। বিগত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনী এখনো পর্যন্ত সক্রিয় হতে পারেনি। অন্তর্বর্ত্তি সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ৮ আগষ্ট এতদিনেও আইনশৃঙ্খলার তেমন উন্নতি হয়নি। সরকার বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দিলেও তারাও সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। ১ লা অক্টোবর চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে উল্টো একদল উশৃঙ্খল ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠির হাতে সেনাবাহিনীর গাড়ি আক্রান্ত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যা হচ্ছে তা দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। জেলা-উপজেলার হাট-বাজার থেকে শুরু করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। দূর্গম অঞ্চলে পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু এবং এমনকি যে পরিবারে গরু থাকে গরুপ্রতিও চাঁদা দিতে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কারা করছে প্রশাসন কী জানেনা ? এভাবে পাহাড়ি অঞ্চলে নিরীহ বাঙালি-অবাঙালি জনগোষ্ঠির কাছ গণহারে চাঁদা তোলা হচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষৎকারে চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, কোনো কোনো মহল পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ হোক এটা চায় না। তিনি প্রশ্ন করেন পহাড়ে যদি এত নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাহলে কীভাবে সাতটি সাতটি সংগঠনের জন্ম হয়। এর মধ্যে একটি ইসলামী গোষ্ঠিও রয়েছে।
প্রকৃতির অপার দান পাহাড় হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর শান্তির নীড়। প্রত্যন্ত গভীর অরণ্যে পর্যন্ত তাদের বসতি। তাদের অল্পসংখ্যক মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সদরে বাস করে মাত্র। বাকীদের বসবাস হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই এর অনেক ওপরে। সেখানে আমার একাধিকবার যাওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত একটি এলাকায় তিন ঘন্টা ইঞ্জিনবোটে চড়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম এলাকার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। সেখানে দেখেছি বিস্তীর্ণ বনভূমি আর হ্রদ, যেন পাশ্চ্যত্যের কোন একটি দেশ; সাজানো গোছানো কী অপরূপ মুগ্ধ হওয়ার মতো, কেউ কেউ বললো এতো সুইজ্যারল্যা-! আসলে সত্যি তাই আমার কাছেও সেরকম মনে হলো। এই দেশটাকে যদি পরিকল্পিত উপায়ে সাজানো যেতো তাহলে এদেশের মানুষকে অন্য রাষ্ট্রের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো না। আমার এক বন্ধু বললো, পাহাড়ে নাকি এমন এমন কিছু স্থান আছে যেখানে দুই চার দিন হাঁটলেও যেন পথ ফুরায় না। পেটের ক্ষিধা লাগলেও করার কিছু থাকে না। মাইলের পর মাইল উঁচুনীচু পাহাড়ি জনপদ ডিঙ্গিয়ে যেতে হয়।
সে বললো, তাদের জীবনযাপন এতো কঠিন যে তা আমাদের বাঙালিরা কখনো কল্পনাও করতে পারবে না। তারা অত্যন্ত নিরহ, কোনরকম ক্ষেতখামারি করে জীবন চলে, তাদের অনেকে লেখাপড়া কী জিনিষ বুঝে না। সেই দুর্গম পাহাড়েও এরকম জনগোষ্ঠির উপর হামলা, হত্যা এবং তাদের জানমাল কারা ধ্বংস করছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশাসনের খুঁজে বের করা দরকার। খুব যখন অত্যাচারী হয় বণের পশুপাখিরাও একসময় হিংসা হয়ে ওঠে আর মানুষের কথা কী বলবো! দেশ ও বিশ্ববাসী চেয়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে। কারণ শত শত বছর আগে থেকে যে জনগোষ্ঠি বাস করে আসছে সেই সকল জাতিসত্তার অধিকার সুনিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কোন জাতিগোষ্ঠিকে মানসিকভাবে হয়রানি নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সেটি বাঙ্গালি হোক আর অবাঙ্গালি হোক। প্রত্যেক জাতিসত্তার অধিকার আছে ভয়ভীতিহীনভাবে বেঁচে থাকার। পাহাড়ি বিস্তীর্ণ জনপদে আজ যা হচ্ছে তা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এর একটা সমাধান টানা জরুরি। সেখানে ফিরে আসুক শান্তির সুবাতাস।
লেখক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক।
মন্তব্য করুন: