প্রকাশিত:
৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৫
সময়ের ব্যবধানে আজকের তরুন আগামীর প্রবীণ। কথাটির সাথে একমাত হলেও বর্তমান প্রবীণকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে নারাজ বর্তমান তরুন সমাজ। অবহেলা, অযত্নে এবং মনোকষ্টে কাটছে আমাদের দেশের মোট প্রবীণে শতকরা ২৫% ।
নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে পরিবারের দায়িত্ব কাধে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যে পরিবারকে ভালো রাখার জন্য, সেই পরিবারেই তিনি আজ বোঝা । ছেলে- মেয়ে ভালো চাকরী করে । ভালো বেতন পায় কিন্তু সেই অক্লান্ত পরিশ্রমী ব্যাক্তিটি আজ বয়সের ভারে নুয়ে পরেছে। আর কোন পরিশ্রম করতে পারে না। শুয়ে শুয়ে দিন কাটায় । সারাদিন শুধু হুকুম জারি করতে থাকে। অনেক বেশি কথা বলতে থাকে । সেগুলো কি আর ছেলে- মেয়েরা মেনে নিতে পারে?
কখনো কখনো লোক লজ্জার ভয়ে ছেলে- মেয়েরা লোকের সামনে ভালো ব্যবহারের অভিনয় করলেও লোক চোখের আড়ালে অপমানের পাহাড় তার সামনে তুলে ধরে। ছেলে -মেয়ে জমি-জমা নিয়ে ঝগড়া করে কিন্তু বাবার কষ্ট বোঝার ক্ষমতা বা অনুভুতি সন্তানের নেই । কখনো কখনো বয়স্ক মানুষগুলো মিথ্যে হাসির আড়ালে মনের কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখে। চিৎকার করে বলতে পারে না , হে সন্তান! আজ তুমি কেন আমায় অবহেলা কর? কি দোষ আমার ? কেন তুমি এমন আচরণ করো ?
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্যানুসারে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংদেশে বয়ষ্ক মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রবীণের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি । উনাদের বয়স সত্তরের উপরে বা তার বেশি। এই বয়সের মানুষগুলো আমাদের কাছে সোনার বৃক্ষের চেয়ে দামী । নিজের পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দিয়ে গেছে সোনালি বর্তমান।
সেই পরিশ্রমী কারিগররা আজ ক্লান্ত হয়ে পরেছে,হারিয়েছে শরীরির শক্তি ,কুচকে গেছে দেহের চামড়া কমে গেছে চোখের দৃষ্টি এবং তাদের দেহ আজ হাজারো রোগের আবাস্থল ।
কেউ বুজতে চায় না , জানতে চায় না, শুনতে চায় না সেই মানুষগুলোর মনের কষ্টের কথা। অবহেলায় দিন কাটে সেই পরিশ্রমী মানুষগুলোর। বিশেষ করে একজন নারী প্রবীনের অবহেলার বিষয়টি আরো বেশি বেদনাদায়ক।
আমরা শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রত্যক্ষ করেছি যে, গ্রামের চেয়ে শহরে প্রবীনদের জীবন বেশি কষ্টকর। তারা সচ্ছল কিংবা অসচ্ছল হোক না কেন। সন্তানরা সবাই কর্মব্যস্ততায় থাকার ফলে প্রবীণদের সময় দেয়ার সুযোগ খুবই কম । ফলে তারা তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। আবার মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো অনিচ্ছা সত্তেও অবহেলার শিকার হচ্ছেন প্রবীণরা ।
এ ছাড়াও প্রবীণরা একাকিত্ব, মানষিক ও শারীরিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকে।
তবে এ সকল সমস্যা থেকে সমাধানের অন্যতম সহায়ক হতে পারে তরুন সমাজ। কেননা তরুন সমাজ সামাজিক মুল্যবোধ ও নিয়ম নীতির একমাত্র রক্ষক । তরুনরা প্রবীণদের কল্যাণে
বিভিন্ন উপায়ে প্রবীণদের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। বিভিন্ন উপায়গুলো তুলে ধরা হলো-
১. আন্তসম্পর্ক গড়ে তোলা- তরুনরা যদি সমাজের বয়ষ্ক মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য সকলকে উৎসাহিত করে , তাহলে একে অপরের মাঝে বন্ধুত্ব সম্পৃতি গড়ে উঠবে।
এই যোগাযোগ প্রবীণদের একাকিত্ব দুর করতে সহায়ক হবে।
২. প্রবীণ সচেতনতা বৃদ্ধি - তরুন সমাজ প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করবে। নতুন কোন সমস্যা বা রোগ সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে ভীতি দুরকরণে কাজ করবে । প্রয়োজনে প্রবীণদের কল্যাণে নতুন কিছু নীতি নির্ধারণ করতে হবে
৩. স্বাস্থ্যসেবা প্রদান- তরুন সমাজ যদি প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবার প্রোগ্রাম করে সেবা প্রদানের চেষ্টা করতে পারে। এলাকা ভিত্তিক প্রবীণদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা , প্রেসার মাপার মত ছোট ছোট কাজ করে সহায়তা করতে পারে।
৪. প্রবীণদের জন্য ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা - অনেক অসচ্ছল বয়স্ক নারী-পুরুষ রয়েছে যাদের খাবার ব্যবস্থা নেই,থাকার ব্যবস্থা নেই,অসুস্থায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে সেই সকল প্রবীণদের জন্য ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করলে প্রবীণদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হবে।
৫। প্রবীণদের জন্য গণশিক্ষার ব্যবস্থা - শিক্ষিত সচ্ছল প্রবীনদের সাথে নিয়ে অসচ্ছল অশিক্ষিত প্রবীণদের মাঝে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।তাহলে প্রবীণ সমাজকে আর অলস সময় পার করতে হবে না ।
প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে তরুন সমাজ হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। প্রবীণদের অনুভুতি অনুধাবনে সহানুভুতি,সম্মান এবং মুল্যবোধের মাধ্যমে প্রবীণদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভব। সুন্দর আচরণ এবং সুন্দর কথাও হতে পারে একজন প্রবীণের দুঃখ দুরভীত করার মাধ্যম। এই সকল কাজের মাধ্যমে তরুন সমাজ সমাজের নেতৃত্ব দেয়ার গুনাবলি অর্জন করবে এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হবে। তরুন সমাজ প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের বাধর্ক্যের সহায়তাকারী নিযুক্ত করতে পারবে।
প্রতিষ্ঠাতা,প্রবীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশন
মন্তব্য করুন: