প্রকাশিত:
৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:০০
সাল দুহাজার পাঁচ। সেপ্টেম্বর মাসের সতেরো তারিখ রাতের আঁধারে আমাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় আমাদের প্রথম সন্তান। ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান । সেদিন ওর বাবা সারা গ্রামে মিষ্টি বিলিয়ে ছিল । ওর দাদি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান । আমি গর্ভবতী থাকাকালীন ওর দাদি সবসময় দোয়া করতে এই যে আল্লাহ যেন তাকে সর্বপ্রথম এক কন্যার দাদি বানান । ওর দাদির ইচ্ছা অনুযায়ী আমার সেই ছোট্টো পাখিটার নাম রাখা হয় দোয়া বিনতে বেলাল । বেলালের কন্যা দোয়া ।দেখতে দেখতে কবে বড় হয়ে যায় আমার দোয়া টেরই পেলাম না। বড্ড প্রতিবাদ মেজাজের ছোট দোয়া খালি একটাই প্রশ্ন ছিল মা এটাতো আমাদের দেশ তাহলে ওরা কেন সব সময় আমাদের শাসন করতে চায় ?আকসা তো আমার মসজিদ তাহলে ওরা নিতে চায় কেন?
ওরা কারা মা?
ওর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা ক্লান্ত হয়ে যেতাম । একদিন হঠাৎ আমার প্রতিবেশী আয়শা ভাবি দৌড়ে এসে বলল ভাবি বিলাল ভাই কোথায় তাকে মোরের রাস্তায় পাঠান । আমাদের দোয়া এক ইসরাইলী সেনাকে পাথর ছুড়ে মারাত্মক আহত করেছে। শের কা বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন ভাবি । সেদিন আমার রুহু পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল আমার দোয়া কে বুঝি মেরেই ফেলবে ওরা । বিলাল সেদিন মোরে গিয়ে দেখে আমার ছোট পাখি কে ওরা বুলেটে ঝাঁঝরা করে ল্যাম্প পোস্টে ঝুলিয়ে রেখে চলে গেছে । তখনো আমার দোয়া বেঁচে ছিল । আহত শেরনীর মতো চিৎকার করে বলেছিল কাপুরুষের দল আমি তোমাকে আবার মারবো ইনশাআল্লাহ । আল্লাহ কসম আমার আঁকা তোমাদের কোন দিন দিব না ।
সেদিন দোয়া চিকিৎসা পূর্ব গাজার সেই ছোট্ট শহরে অলিতে গলিতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতাকামী প্রতিটা মুসলীমে হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বিলাল দোয়ার ঝুলিয়ে রাখা দেহটার কাছে আসতেই রক্তে ভিজে যায় । ছোট্ট দোয়ার লাশ টা নামিয়ে বিলাল কোলে তুললে নিলো আগ্নিঝরা চোখদুটো তখন তাকিয়ে আছে । বিলাল কাঁপা হাতে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলো । বিলাল এর চোখ অশ্রু গড়িয়ে পড়লো । খুব শখ করে মেয়ে নাম দোয়া রেখেছিল বছর ছয়েকের দোয়া যে জান্নাতে পাখি হয়ে উড়ে গেল আজ । তাদের দোয়া এখন কেবল তাদের দোয়ায়ই বেঁচে রবে লাশটা নিয়ে বাড়ির উঠানে প্রবেশ করতে আমি দৌড়ে গেলাম । কাছে গিয়ে দোয়ার রক্তিম নিথর দেহ টা দেখে আমি খুব কেদেছিলাম । তারপর ছোট দোয়া কে ছোট একটা কবরে শুইয়ে দেওয়া হলো চিরতরে।
পরবর্তী পেজ গুলো সম্পূর্ণ খালি দেখে দাউদ ডায়েরিটা বন্ধ করলো । নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আব্বা তারপর কি হয়েছিল ?
বিলাল অশ্রু সিক্ত নয়নে বললো তারপর দোয়ার আকসা রক্ষা করতে সেই শহরের সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল । যা আজও পালন করছে সবাই । দোয়ার আকসা আমরা কাউকে দিব না ইনশাআল্লাহ ।
মন্তব্য করুন: