প্রকাশিত:
৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:১৬
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে 'ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ ফি' নামক একটি ফি নেওয়া হয়। তবে, ফি নেয়া হলেও আলাদা করে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন তহবিল। ফলে এই ফি থেকে কাঙ্খিত উপকার পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ তহবিল গঠন করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে গেলে যে পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয় তার মধ্যে ২০০ টাকা থাকে ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ ফি খাতে। কিন্তু এই খাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ব্যাংক একাউন্ট নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল একাউন্টের সাথে জমা হতে থাকে এই ফি। যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের কোন কাজে ব্যবহৃত হয় না।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সময় ২০২০ সালের ২৩ জুন ছাত্রকল্যাণ ফান্ড গঠনের জন্য ১০ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতিবেদন বুঝিয়ে দিলেও তহবিল গঠনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এই বিষয়ে কথা হয় উক্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নাছির উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, এই কমিটির রিপোর্ট দেয়ার পর দুই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গিয়েছে তাদের টাকা আলাদা করে রাখা হয়। এই ফান্ডে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মত আছে। তবে আলাদা করে ছাত্র কল্যাণ ফান্ড নেই আমাদের।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হলে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর আবেদন করা হয় তখন প্রশাসন দায়সারাভাবে কিছু টাকা দেয়, যা অসুস্থ শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় কোনো কাজেই আসে না। অথচ এই তহবিল শক্তিশালী হলে শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হতো।
এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান সোহাগ বলেন, 'ছাত্র কল্যাণ তহবিলের টাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জরুরী খাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত। এই খাত থেকে কেউ অসুস্থ বা কোনো আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এমন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করা হলে তা ফলপ্রসূ হবে। শিক্ষার্থী হিসেবে আমার দাবি যে এই টাকা যথাযথ খাতে খরচ করা।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, 'দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকল্যাণ ফান্ড গঠন এখন সময়ের দাবী। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্রুততম সময়ে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য এর বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এতদিনেও ছাত্র কল্যাণ ফান্ড না থাকা দুঃখজনক।'
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের প্রধান ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, 'আমি দায়িত্ব নিয়েছি অল্প কিছুদিন হয়েছে। আমি আসলে এই তহবিল সম্পর্কে জানলেও এটির যে আসলে আলাদা কোনো হিসাব নেই সে সম্পর্কে অবগত নই। আমি এটি নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।'
তিনি আরও বলেন, 'এই তহবিল থাকলে আসলে ছাত্র পরামর্শক দপ্তরের জন্যই ভালো। কারণ ছাত্র পরামর্শক দপ্তরের অনেক কাজ করার সুযোগ থাকলেও দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে বাজেট বা এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আশা করি এই তহবিলের যাবতীয় হিসাব ছাত্র পরামর্শক দপ্তরের অধীনে থাকলে কাজ করার ক্ষেত্রে আরও সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, 'আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। এই সপ্তাহেই ছাত্র পরামর্শক এবং প্রতিটি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টাদের সাথে একটি মিটিং আছে। সেখানে এই তহবিলের ব্যবহার এবং এর ক্ষেত্রে কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে তা সম্পর্কে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
মন্তব্য করুন: