প্রকাশিত:
৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৩১
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থাকলেও শিক্ষার্থীদের নেই তেমন পদচারণা। বই সংকট, পাঁচতলায় অবস্থান এবং ফটোকপি মেশিন না থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলে জানা যায়। দীর্ঘ ১৮ বছরেও সংকট না কাটায় অসন্তোষ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, একাডেমিক রেফারেন্স বইয়ের স্বল্পতা, ফটোকপি মেশিনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে তারা লাইব্রেরি বিমুখ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি পাঁচ তলায়। বিপরীতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য নেই লাইব্রেরিতে যাওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা।
পাঁচ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলার পূর্ব পাশে ছোট দুই কক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অবস্থিত। লাইব্রেরি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯২৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা মাত্র ১০০টি। সর্বসাকুল্যে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
এছাড়া, দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২০ টি, জার্নাল ও রিপোর্ট সংখ্যা ১,৩৮০ টি, ম্যাগাজিন সংখ্যা ৫ টি, ই-বুক প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে ৩৫০০ টি ওয়াইলি পাবলিকেশন এবং ৫০০ টি টিস্টোর, রিসার্চ ফর লাইফ সাইটের।
তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় বই ও অন্যান্য সুবিধা অপ্রতুল বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান সোহাগ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী নিয়েই আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু পাঁচ তলার উপর লাইব্রেরী দেখে হতাশ হয়েছিলাম। এরপর একাডেমিক রেফারেন্স বইয়ের খোঁজে গিয়েই খালি হাতেই ফিরতে হয়, কারণ বই নেই। তাছাড়া যা বই আছে সেগুলো এক কপি, ফটোকপি করার সুযোগও লাইব্রেরিতে নেই। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পড়ার প্রয়োজনে গেলেও প্রতিবারই নিরাশ হয়েছি। তাই ইচ্ছে কমে গেছে লাইব্রেরিতে বসার।'
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী লাত্বিফুল মারজান বলেন, ‘লাইব্রেরিতে বইয়ের সল্পতা আছে, কিছু কিছু বই খুঁজলে পাওয়া যায়না। লাইব্রেরি খোলা রাখার সময়ও বাড়ানো উচিত। বিভাগ ভিত্তিক বইয়ের সংখ্যাও অনেক কম, সিট সংখ্যা অনেক কম। যেসময় পরীক্ষার চাপ শুরু হয় তখন জায়গা পাওয়া যায়না। প্রশাসনের উচিত এ সমস্যা গুলোর সমাধান করা।’
লাইব্রেরির নানা সংকটে আক্ষেপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় সরকার বলেন, 'একাডেমিক বই যা আছে তা আমাদের শিক্ষকরাও আমাদের দেন। পাশাপাশি এগুলোর পিডিএফ থেকেও আমরা পড়তে পারি। কিন্তু আসলে আমার ফিকশন বা থ্রিলার টাইপের বই পছন্দ বেশি, কিন্তু এই টাইপের বই বলতে গেলে লাইব্রেরিতে নেই। যারফলে মাঝামাঝে লাইব্রেরিতে যাওয়া হয় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কিন্তু তেমন আগ্রহ পাই না লাইব্রেরিতে যাওয়ার।'
সার্বিক বিষয়ে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মো. মুহিউদ্দিন আলম বলেন, 'একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার কোনটাই আমরা রিচ করতে পারিনি। বইয়ের সল্পতা আছে, আমরা প্রত্যেক অর্থবছরে বিভাগগুলো থেকে ডিপোজিশন পাই। চাইলেও ডিপোজিশনে পাওয়া সকল টাকার বই কেনা যায় না। এজন্য সল্পতা থেকে যায় আসলে। এবার ছত্রিশ লাখ টাকা পেয়েছি। বই কেনার বাজেট আছে প্রায় ২০ লাখ টাকার। বিভাগগুলো ডিপোজিশনের বাইরে বই কেনার এখতিয়ার আমাদের নাই। আর ছাত্ররা যদি কোন বইয়ের চাহিদা করে তখন আমরা সে বইগুলো কিনতে পারি। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে এধরণের দাবি আসেনা, এলে আমরা যথাযথ উদ্যোগ নিবো।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, 'লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতার কথা জানি। আমরা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে নতুন ক্যাম্পাসে চলে যাবো, নতুন ক্যাম্পাসে বড় একটি লাইব্রেরি ভবন হয়েছে, ওখানে সিটিং ক্যাপাসিটি, বইয়ের সংখ্যা অনেক থাকবে। তখন আশাকরি কোন সমস্যা হবেনা। আপাতত আমরা বইয়ের সল্পতা কমাতে কাজ করবো। এ সংক্রান্ত একটা কমিটি করেছি। আসলে ৫০ একরের এই ছোট ক্যাম্পাসে চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না।'
মন্তব্য করুন: