মঙ্গলবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন
  • কক্সবাজার বিমানঘাঁটিতে হামলা নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর
  • সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথবাহিনীর প্যাট্রলিং
  • বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ ৪ মহাসড়ক ও আট সেতুর নাম পরিবর্তন
  • তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
  • রমজানে অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
  • ছিনতাইরোধে মাঠে নামবে পুলিশের ৩ বিশেষায়িত ইউনিট
  • বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে শাসন কাজ পরিচালনা সহজ নয়
  • পদত্যাগের আলটিমেটাম নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২ ডেডলাইন দিয়েছে

ছোট গল্প

অগ্নুৎপাতের দেশে

রুখসানা গাজী রিনা

প্রকাশিত:
১০ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৩৩

আমার বড় মেয়ে তখন মাত্র ও লেভেল পরীক্ষা দিয়েছে। ওকে শেখাচ্ছিলাম কিভাবে ফরমাল বায়োডাটা লিখতে হয়। তাকে উৎসাহিত করার জন্য বললাম ইন্দোনেশিয়ায় একটা রিপ্রোডাক্টিভ হেল্থ এর উপরে কনফারেন্স হচ্ছে, যেখানে ইয়োথ গ্রুপ অংশ নেয়। চলো আমরা তোমার বায়োডাটা লিখি আর এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য পাঠাই। ইয়োথ গ্রুপের চাহিদা অনুসারে মেয়ে সুন্দর করে একটা "statement of purpose" ও প্রস্তুত করলো।

আশা করিনি এত সহজে সে youngest participant হিসাবে ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ড পেয়ে যাবে কিন্তু এতোটুকু মেয়েকে একা ছাড়ি কি করে? সঙ্গী হলাম পুরো পরিবার। অবশ্য আমি নিজেও রেজিস্ট্রেশন করলাম কনফারেন্সের জন্য।ইন্দোনেশিয়াকে বলা হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপপুঞ্জ, এই দেশটির রয়েছে ১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপ তার মধ্যে ৯২২টিতে মানুষের বসতি রয়েছে। দেশটির ৩৪ টি প্রভিন্স, তার মধ্যে যোগজাকার্তা একটি, যেখানে কনফারেন্সটি হচ্ছিল। মুশকিলের ব্যাপার ঢাকা থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই। ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া ও জাকার্তা হয়ে যোগজাকার্তা।

ভালো লাগলো শুনে যে ইন্দোনেশিয়া তাদের গারুদা এয়ারলাইন্সের প্লেন নিজেরাই বানায়। প্লেন থেকে নেমে মেয়েকে বললাম, " জানোতো, এখানে একটা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে?", শুনে মেয়ে একটু ঘাবড়িয়ে গেল। যাইহোক, যারা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তাদেরকে আলাদা একটা হোটেলের রাখা হলো আর আমরা অন্য হোটেলে থাকলাম। মেয়েকে একটা আলাদা ফোনের সিম দিলাম যাতে যোগাযোগ করতে পারে কিন্তু ওখানকার রুপিয়ার মূল্য এত কম যে আমরা আন্দাজ করতে পারলাম না তাকে ফোনে কি পরিমান টাকা ভরে দিতে হবে। সে করেছে কি দেশে একবার নানা-নানির সাথে কথা বলেছে আর সব টাকা শেষ হয়ে গেছে, আমাদের সাথে রাত্রে আর যোগাযোগ করতে না পেরে গাল ফুলিয়ে রইলো।

কনফারেন্স শেষে বেড়ানোর পালা। প্রথমে গেলাম বড়বুদুর, পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধমন্দির দেখতে যার সম্পূর্ণটা কালো কষ্টি পাথরে গড়া, আট তলা সমান উঁচু। সেখানে যেতে হলে সম্মান দেখানোর জন্য সারং নামের একটা লুঙ্গির মতো ড্রেস পরে যেতে হয়। বহু কসরত করে আমরা সারং জড়িয়ে মন্দিরের কাছে গেলাম কিন্তু সেটার প্রতিটা ধাপ এত উঁচু আমার পক্ষে সারং পরে সম্ভব হলো না উপরে ওঠা। দুই মেয়ে এবং তাদের বাবা একদম উপরের ধাপে উঠলো, ছবি তুলল। ফেরার সময় আমরা আগ্নেয়গিরির খুব কাছের একটা ছোট্ট গ্রামের ভিতর দিয়ে আসলাম, আমাদের গাইড দেখালো, আগেরবছরে অগ্নুৎপাত ঘটে খালটি লাভা দিয়ে কিভাবে প্রায় ভরে গেছে। আমি ভাবছিলাম একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরির পাদদেশে ওখানকার মানুষ কি অবিশ্বাস্য সাহসের সাথে নির্ভয়ে চাষবাস করছে, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

লাঞ্চ করার জন্য আমরা এক জায়গায় থামলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের পাসপোর্ট এবং ডলারের ব্যাগটা রেখেই হোটেলে ফিরলাম। ফিরেই মনে পড়ল পাসপোর্ট ও টাকা ফেলে এসেছি, আবার দৌড় রেস্টুরেন্টে। কিন্তু ওখানকার মানুষ এতটাই সৎ, সাথে সাথে ব্যাগটা ফেরত দিল বোধহয় খুলেও দেখেনি ভিতরে কি আছে। এরপরে সুলতানের পুরনো আমলের প্রাসাদ দেখতে গেলাম। দেখলাম বহু প্রাচীন আমলে মহিলা এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা সুইমিং পুল ছিল। ভেজিটেবল ডাই দিয়ে তারা কাপড় রং করতো। লক্ষ্য করলাম সাধারণ মানুষের চোখমুখে না আছে কোন টেনশন না আছে অস্থিরতা, ছোট ছোট দোতলা বাড়ি যেন শান্তির আখড়া। জায়গাটা ভূমিকম্পপ্রবণ বলে উঁচু বিল্ডিং করা নিষেধ।

সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো এবং উৎসাহজনক ছিল মেয়েদের প্রতিটি কাজে সমান অংশগ্রহণ। পর্দাশীল মহিলারা একই সাথে বাচ্চা ও বাজার নিয়ে, বুট জুতো পরে, স্কুটি চালিয়ে চলাফেরা করছে, দোকানের বেশিরভাগ কর্মচারী মহিলা।ওখানকার বাটিকের এবং মাটির তৈরি জিনিসের বিশ্বজোড়া সুনাম। পথের পাশে গাড়ি থামিয়ে মাটির তৈরি একটা টিসেট কিনে নিলাম যেটা এখনো আমার সংগ্রহে আছে, আর কিনলাম বাটিকের কিছু শার্ট, উপহার দেয়ার জন্য। আমার মেয়ে জীবনে প্রথম ডলারে অ্যালাউন্স পেল। তার কাছে যোগজাকার্তার সবকিছু এত পছন্দ হলো, সে বলল, "মা আমি যখন বুড়ো হয়ে যাব তখন এইখানে এসে থাকবো, for peace"। আমি অবাক হয়ে গেলাম একজন পরিণত মানুষের মতো ওর এইধরনের উপলব্ধি দেখে।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর