শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই
  • নতুন সিইসি ও ইসিদের শপথ কখন জানা গেল
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, বেশি দূষণ যেখানে
  • এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া
  • নাসির উদ্দীনকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন
  • আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না
  • শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
  • আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উদ্যোক্তা নয় চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে
  • নির্বাচনকালে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা চায় ইসি
  • রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কার না চায় তাহলে এখনই নির্বাচন দেওয়া হবে

ছোট গল্প

হাড় কিপটে মজিদ

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ

প্রকাশিত:
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৭



এক গ্রামে ছিল মজিদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন হাড় কিপটে, অর্থাৎ তিনি প্রতিটি টাকার হিসাব রাখতেন। গ্রামের লোকেরা তার এ কিপটে স্বভাবের জন্য তার নাম দিয়েছিল হাড় কিপটে মজিদ। তিনি কখনো কিছু কিনতেন না, আর কখনো কিছু দান করতেন না। তার কাছে টাকা ছিল কিন্তু প্রেম, স্নেহ কিংবা বন্ধুত্বের মতো মূল্যবান জিনিসের অভাব ছিল।
মজিদ তার ছোট্ট বাড়িতে একা থাকতেন। প্রতিদিন সকালে উঠে তিনি তার পঁচিশটি টাকা গুনতেন, তারপর সেটি গুনে গুনে সারা দিন রাস্তায় ঘুরতেন। গ্রামের ছেলেরা তাকে নিয়ে হাস্যরস করত, কিন্তু মজিদ কখনো কারো কথায় পাত্তা দিতেন না।
একদিন গ্রামের মেলায় মজিদ সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি অবশ্যই একটি নতুন কাপড় কিনবেন। কিন্তু পয়সা খরচ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি মেলা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, যেখানে সবাই আনন্দের সাথে কেনাকাটা করছিল। সেখান থেকে একটি দোকানে একটি সুন্দর কাপড় দেখে তার মনে হলো, এটা কিনলে কি হবে? পরে আমি যে আবার গুনতে পারব না!
তার পেছনে এক বৃদ্ধ মহিলা এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, মজিদ, কেন তুমি আনন্দের মধ্যে নেই? একটু কিছু কিনে নাও। জীবনে একবারের জন্যও তো কিছু খরচ করো। কিন্তু মজিদ রেগে বললেন, আমি টাকা খরচ করব কেন? আমার টাকা থাকলে সবই সম্ভব!
মেলার শেষ দিন এসে গেল। গ্রামের লোকেরা ঘরে ফিরতে শুরু করল। মজিদ সবকিছু দেখছিলেন। হঠাৎ একটি ছোট্ট ছেলে দৌড়ে এসে বলল, মজিদ ভাই, আমার জন্য একটি চকোলেট কিনে দাও। আমি খুব খুশি হব।
মজিদ একটু ভেবেছিলেন। তারপর তিনি বললেন, না, আমি তো কিনতে পারি না। টাকা সঞ্চয় করা জরুরি। ছেলে হতাশ হয়ে চলে গেল।
তারপর মজিদ একটি ক্ষুদ্র চিন্তা করলেন। কেন না আমি সবাইকে দান করি? তাহলে তারা আমার কথা মনে রাখবে! কিন্তু এর জন্যও তিনি নিশ্চিত হতে চাইলেন যে তিনি টাকা হারাচ্ছেন না। তিনি চিন্তা করলেন, কিছু বড় দান করলে হয়তো খরচ কমে যাবে।
শেষে, মজিদ একটি বড় দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। গ্রামে সবাই এসে উপস্থিত হল। তিনি বললেন, আমি সবাইকে দান করব! কিন্তু তার কিপটে মন তাকে বাধা দিচ্ছিল।
অবশেষে, তিনি বললেন, আমি আপনাদের জন্য মিষ্টি আনতে পারব। সবাই খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ দিল। কিন্তু মজিদ নিজে সেই মিষ্টির স্বাদ নিলেন না। তিনি সবকিছু নিয়ে নিজেই ভেবেছিলেন, আমি টাকা খরচ না করলেই তো আমার লাভ!
তবে গ্রামের লোকেরা বুঝতে পারল যে মজিদের হৃদয়ে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। তারা বলল, হাড় কিপটে মজিদ, তুমি এতদিন শুধু টাকা গুনতে গুনতে চলে এসেছ। কিন্তু জীবন তো কেবল অর্থ নয়। প্রেম, বন্ধুত্ব আর সুখের মুহূর্তও রয়েছে।
মজিদ প্রথমে অবাক হলেও পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে, কিপটেমি আসলে তাকে সম্পূর্ণ একাকী করে ফেলেছে। তিনি বুঝলেন, জীবনের আনন্দ পাওয়া যায় একে অপরের সাথে ভাগ করে নিলে।
এভাবে মজিদ তার কিপটে স্বভাব থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে জীবন যাপন শুরু করলেন। তিনি গ্রামের সবাইকে ভালোবাসতে এবং সাহায্য করতে লাগলেন। তিনি শিখলেন যে, জীবনকে অর্থের সীমারেখায় আবদ্ধ না করে, স্নেহ, বন্ধুত্ব এবং আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই আসল সাফল্য।
এবং সেই দিন থেকে, গ্রামের লোকেরা তাকে হাড় কিপটে মজিদ বলে ডাকতে পারলেও, তিনি তখন হয়ে উঠেছিলেন স্নেহময় মজিদ।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর