মঙ্গলবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন
  • কক্সবাজার বিমানঘাঁটিতে হামলা নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর
  • সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথবাহিনীর প্যাট্রলিং
  • বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ ৪ মহাসড়ক ও আট সেতুর নাম পরিবর্তন
  • তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
  • রমজানে অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
  • ছিনতাইরোধে মাঠে নামবে পুলিশের ৩ বিশেষায়িত ইউনিট
  • বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে শাসন কাজ পরিচালনা সহজ নয়
  • পদত্যাগের আলটিমেটাম নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২ ডেডলাইন দিয়েছে

ছোট গল্প

কৃষকের মেয়ে কুসুম

জান্নাতুল ফিরদাউস রুকু

প্রকাশিত:
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:১০

গল্পের পটভূমি ১৯৪০-এর দশকের বাংলা গ্রাম। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের মধ্যে যে বৈষম্য এবং দূরত্ব ছিল, সেই সময়ে জমিদারদের ক্ষমতা ছিল অপরিসীম। এমনই এক জমিদারের ছেলে, অরুণ, যিনি বিলাসবহুল জীবনযাপনের মধ্যেই বড় হয়েছেন, আর মনের মধ্যে একদিন বড় ব্যবসায়ী হবেন—এই স্বপ্ন। অন্যদিকে, গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে, কুসুম, যে কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালায়, তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সামান্য—শান্তিপূর্ণ এক জীবন আর তার প্রিয় মানুষটির পাশে থাকা।

অরুণ কলকাতা থেকে পড়াশোনা শেষ করে গ্রামের ব্যবসায়িক কাজকর্ম তদারক করতে আসে। জমিদার বাড়ির ভেতরে বসেই সারা গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করত তার পরিবার। জমি, কৃষি, ব্যবসা—সবই তাদের অধীনে। গ্রামের কৃষকরা তাদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল, আর এই ক্ষমতার মাধ্যমেই জমিদার পরিবার গ্রামবাসীদের উপর প্রভাব বিস্তার করত।

একদিন জমিদার বাড়ির এক ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে গ্রামের সব কৃষককেই ডাকা হলো। অরুণ সেদিনই প্রথমবার কুসুমকে দেখল। কুসুমের চোখে মায়াবী চাহনি আর তার নিরলস পরিশ্রমী চেহারা দেখে অরুণের মন অদ্ভুতভাবে টান অনুভব করল। গ্রামের সাধারণ এক মেয়ে হলেও কুসুমের মধ্যে এক সহজ সৌন্দর্য ছিল, যা অরুণকে মুগ্ধ করে।

অন্যদিকে কুসুম, যে একদিন আগে থেকেই শুনেছিল জমিদারের ছেলে ফিরে এসেছে, খুবই ভীত ছিল। জমিদার পরিবারকে সে সম্মান করলেও ভয় পেত, কারণ তাদের সামনে কিছু বলার সাহস সবারই কম ছিল। কিন্তু অরুণের মিষ্টি ব্যবহারে কুসুম কিছুটা স্বস্তি বোধ করল, যদিও জমিদারের ছেলের প্রতি তার কোন আশা বা আকাঙ্ক্ষা ছিল না।

এরপর অরুণ ব্যবসায়িক দায়িত্ব নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় যেত, আর তারই মধ্যে সে কুসুমের বাড়ির পাশের জমিগুলো পরিদর্শন করতে যেত। প্রতিবারই কুসুমকে দেখার একটি অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হতে লাগল তার মধ্যে। কুসুমও খেয়াল করছিল, কিন্তু কিছুই বলার সাহস ছিল না। ধীরে ধীরে, একদিন অরুণ সাহস করে কুসুমের সাথে কথা বলতে শুরু করল। প্রথমে খুব সাধারণ কথা থেকে তাদের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই কথাগুলো এক গভীর বন্ধুত্বে রূপ নেয়।

অরুণ এবং কুসুমের সম্পর্কের কথা ধীরে ধীরে গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। জমিদারের ছেলের সাথে একটি সাধারণ কৃষকের মেয়ের প্রেম কাহিনী সহজভাবে কেউই মেনে নিতে পারল না। অরুণের পরিবার জানতে পেরে ভীষণ রেগে গেল। জমিদার বাড়ির সম্মানকে আঘাত করবে এমন কোন কিছু তারা বরদাশত করতে পারত না। তারা চাইল অরুণকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে তার এই সম্পর্ক থেকে দূরে সরিয়ে দিতে।

অন্যদিকে, কুসুমের পরিবারও ভীষণ ভীত হয়ে পড়ল। জমিদার বাড়ির সাথে বিরোধে জড়ানো মানেই সর্বনাশ। তার বাবা-মা কুসুমকে বারবার বলল অরুণের সাথে এই সম্পর্ক আর না বাড়াতে। কিন্তু কুসুমের হৃদয় তখন অরুণের জন্য ভরে উঠেছে। সে জানত, এই সম্পর্ক সমাজের চোখে অসম্ভব, কিন্তু মনের গভীর টানকে উপেক্ষা করা সহজ ছিল না।

অরুণও ভেঙে পড়ল। সে বুঝতে পারল যে পরিবার, সমাজ এবং সম্পদের চাপে তাদের ভালোবাসা দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে হার মানতে চাইল না। অরুণ সিদ্ধান্ত নিল যে সে কুসুমকে ছাড়বে না, এবং পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করবে।

এরপর অরুণ পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে কুসুমের সাথে দেখা করতে থাকে। কুসুমও তার ভালবাসায় অবিচল থাকে, কিন্তু একদিন জমিদার বাড়ির লোকজন তাদের ধরা পড়ে ফেলে। অরুণের বাবা তাকে বাড়িতে বন্দী করে রাখে, আর কুসুমের পরিবারকে হুমকি দেয় গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার।

অরুণ নিজের পরিবারের সাথে তর্ক করে, আর কুসুমের পরিবারের উপর চাপ কমানোর জন্য গ্রামের বাকি কৃষকদের কাছে গিয়ে সহানুভূতি চায়। সে বুঝতে পারে, তাদের মিলন হতে হলে তাকে পরিবার এবং গ্রামের সবাইকে বোঝাতে হবে যে ভালোবাসা শ্রেণীভেদ মানে না।

কুসুমও গ্রামে নিজের সৎ জীবন এবং ভালো চরিত্রের মাধ্যমে সবার সম্মান অর্জন করেছিল, তাই গ্রামের কিছু মানুষ তার পাশে দাঁড়াতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অরুণের বাবা বুঝতে পারলেন, সমাজ বদলে যাচ্ছে, আর ছেলের ভালোবাসার পথ রুদ্ধ করে লাভ হবে না।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, অরুণ এবং কুসুমের প্রেমের সম্পর্ক অবশেষে স্বীকৃতি পেল। জমিদার বাড়ির সম্মান বজায় রেখে এবং গ্রামের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে, অরুণ তার ব্যবসায়িক দায়িত্ব চালিয়ে যেতে থাকে, আর কুসুম তার পাশে থেকে তাকে সবসময় সমর্থন করত।

তাদের সম্পর্ক প্রমাণ করল যে ভালোবাসা শ্রেণী, পেশা, ধনী-গরীবের বৈষম্য মানে না।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর