প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১৫
পুতুল প্রেগন্যান্ট। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটা পাড়ায় দারুণ কানাঘুষা শুরু হয়েছিল। পাড়াপড়শিরা বলাবলি করছিল, 'রাতুলের বউ নাকি পোয়াতি হইছে। রাতুল যে বন্ধ্যা পুরুষ। তাহইলে অর বউ পুতুল পোয়াতি হইল কেমন করিয়া।'
এসব কানাঘুষা সত্ত্বেও রাতুলের আনন্দের যেন শেষ ছিল না। স্ত্রীর আদর-যত্ন ও সেবার মাত্রা আগের চেয়ে দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সে। এমনিতেই দারুণ কেয়ারিং হাসবেন্ড রাতুল। তার উপর বিয়ের এত বছর পরে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এরচেয়ে বড় আনন্দের সংবাদ আর কী হতে পারে তার জন্য? সুতরাং সাতপাঁচ ভেবে ওসব সমালোচনাকে খুব একটা পাত্তা দিত না সে। রাতুলের মা-বাবাও আনন্দে আটখানা ছিল। ছেলের সন্তান হবে। নাতিনাতনির মুখ দেখতে পাবেন। বংশে বাতি দেওয়ার উত্তরাধিকারী আসবে। এই বয়সে এটাই তো চায় সকল মানুষ। তাই বউমাকে চোখে চোখে রাখছিল রাতুলের মা। যে বাবা লজ্জায় বউমা সম্পর্কে কোনো কিছু বলতে পারতেন না, সেই বাবাও মুচকি মুচকি হেসে নানান রকম পরামর্শ দিচ্ছিলেন ছেলেকে। এমনকি বউমার যাতে কোনোভাবেই কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে বলতেন রাতুলকে।
রাতুল বাবা-মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো। সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি জোর দেওয়া ইত্যাদি বেশ ভালোভাবেই করতো সে। মনের সজীবতা ফিরে পেয়েছিল রাতুল। তবে রাস্তায় হাঁটার সময় রাতুল বুঝতে পারছিল, তাকে নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে লোকজন। দিন যত বেশি গড়ায় কথা তত বেশি বাড়তে থাকে।
এই তো। এক দুপুরবেলার ঘটনা। মৌরিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল সুমিতার। তাদের পাশেই আড়ালে একটা কাজ করছিল রাতুল। দুজনের কেউই বুঝতে পারেনি তার উপস্থিতি। এজন্য দুজনের মধ্যে যেসব কথাবার্তা হয়েছিল তার সবটুকুই শুনে ফেলেছিল রাতুল। মৌরিয়াকে সুমিতা বলেছিল, 'জানিস বইন। রাতুলের বউয়ের প্যাট হইছে। সবাই কছে জারুয়া প্যাট হইছে। রাতুলের বউ পুতুলের নাকি স্বভাব চরিত্র ভালো নোহায়। এই জইন্যে নাংগোক দিয়া প্যাট বানাইছে।'
মৌরিয়া বলেছিল, 'ওমরা সবাই কেমন করিয়া বুঝিল জারুয়া প্যাট হইছে? আর রাতুলের বউ খারাপ, এইজইন্যে অর জারুয়া ছাওয়া হইবে?'
'ওমা, তোমরা এইলা শোনেনে নাই বইনো। গোটাল গ্ৰামোত ছিঃ ছিঃ পড়ি গেইছে। শোব্বায় ঘিন্নায় রা রা করেছে।'
'ক্যানে, কী হইছে যে শোবায় ছিঃ ছিঃ করিবে?'
মৌরিয়ার কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে সেদিন হাসতে হাসতে চলে গিয়েছিল সুমিতা। যেতে যেতে বলেছিল, 'সময় হইলে তামান ট্যার পাইবেন তোমরা। আগোত সময় হউক, সেই দিন আসুক। তারপর বুঝিবেন।'
সুমিতা এরকমই। কথা বলে কিন্তু শেষ করে না। একটা রহস্য রেখে চলে যায়। পরে কোনো দিন দেখা হলে আবার কথা তোলে। নানান গল্প করে। সুমিতার এই স্বভাবের জন্য খুব কম মানুষই মন থেকে পছন্দ করে তাকে। তবে, পছন্দ না করলেও লোকজন মেশে তার সাথে। কেননা, দশ গ্ৰামের খবর থাকে তার কাছে। এলাকার হোমরাচোমরা লোকেরাও সুমিতার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। কারণ ঐ একটাই। ওর সাথে সম্পর্ক না রাখলে কখন কার নামে কী দুর্নাম ছড়িয়ে দেবে তার কোনো ঠিক নেই। সুমিতার এই স্বভাবের কথা খুব ভালো করে জানে রাতুল। এজন্য খুব একটা গা করেনি তার কথায়।
দিন যায় রাত আসে। আবার দিন যায় রাত আসে এবং রাত চলেও যায়। পুতুলের শরীর ভারী হতে থাকে। নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কিছু সমস্যাকে কোনোভাবেই প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের সাথে মেলানো যাচ্ছে না। অতিদ্রুত অস্বাভাবিকভাবে পেটফুলে উঠলো পুতুলের। রাতুল ও তার মা-বাবা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কখনো কখনো ভীষণ ব্লিডিং হতে লাগল। সাথে সাথে অস্বাভাবিক বমি। এমনকি রক্ত বমিও হচ্ছিল কোনো কোনো সময়। এলাকায় ভালো চিকিৎসা না পেয়ে রাতুল স্ত্রীকে নিয়ে গেল হাসপাতালে।
হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুতুল করুণ সুরে রাতুলকে বলল, 'আমি সম্ভবত আর বাঁচব না রাতুল। সন্তানের মুখ দেখা হবে না আমার।'
স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে রাতুল বলল, 'অলক্ষণি কথা মুখে এনো না পুতুল। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
রাতুল ও পুতুল দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়ি চলতে লাগল তার আপন গতিতে।এদিকে রাতুল ও পুতুলকে নিয়ে নানারকম গল্পগুজব ছড়িয়ে পড়তে লাগল। লোকজন বলাবলি করতে লাগল, 'জারুয়া ছাওয়া হইবে। এইজইন্যে বউক ধরি হাসপিটাল গেইছে।'
কেউ কেউ বলল, 'জারুয়া ছাওয়া কি আর এমনি এমনি হয়। সৃষ্টিকর্তা কষ্ট দিয়া তারপর ছাওয়া দিবে। আবার মরা বাচ্ছাও হবার পারে। বাচ্ছা হওয়ার সময় তো এখনো হয় নাই।'
কেউ কেউ বলল, 'ঐ মাগি কষ্টবান হয়্যা মরিবে।'
অর্থাৎ যার মুখে যে রকম কথা আসলো সে সেরকম কথাই বলতে লাগল।
রাতুল হাসপাতালে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মৌরিয়ার বাড়িতে এলো সুমিতা। মৌরিয়া কিছু বলার আগেই সুমিতা বলল, 'সেদিন কঁহ নাই। সময় হইলে তামোন ট্যার পাইবেন। এখন দ্যাখেছেন তো। হাসপিটালোত গেইল। বাচ্ছা খসেবার জইন্যে।'
এদিকে সেদিকে কী যেন তাকিয়ে দেখল সুমিতা। তারপর কন্ঠ নীচু করে বলল, 'তোমার ভাতার বাড়িত আছে, নাকি বায়রোত গেইছে?'
'বায়রোত গেইছে। অনেক ডেরি করিয়া আসিবে।'
'তাহইলে ভালো হইল। ভাতার সবসময় বাড়িত থাকিলে ছাই ছুঁই নাগে' হাসতে হাসতে বলল সুমিতা।
মৌরিয়া লক্ষ্য করল, জারজ সন্তান নিয়ে দারুণ আগ্ৰহ সুমিতার। এবার হয়তো প্রমাণ করেই ছাড়বে রাতুল ও পুতুলের আগত সন্তান জারজ ছাড়া আর কিছুই না।
সুমিতা এবার একেবারে গা ঘেঁষে বসল মৌরিয়ার। মৌরিয়া একটু পিছিয়ে গেল। মুখে মুখ রেখে কথা বলা ভালো লাগছে না তার। সুমিতার মুখ থেকে একটা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। একদম বিশ্রী। কিন্তু সুমিতা এটা বুঝতে চাচ্ছে না। সবার মুখের উপর মুখ রেখে কথা বলতে চায় সে। এজন্য মৌরিয়া যতই পিছিয়ে যাচ্ছে সুমিতা ততই কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। অবশেষে মৌরিয়া বলতে বাধ্য হলো, 'ঐঠে থাকি কও ক্যানে তোমরা।'
'ঐ যে রাজন আছে না ' সুমিতা বলল। 'অয়হে যত্ত নষ্টের মূল।'
'রাজন কী কইললে ফির? অয় তো ভালো চ্যাংরা।'
'অয় কী করে নাই কওছিনি! রাতুলের বউয়ের সাথে অর যত নষ্টিফষ্টি। দিন নাই রাইত নাই। সবসময় ঐ বউটার গোরোত পড়ি থাকে অয়। রাতুলও কিছু কয় না। মাইয়ার ভারুয়া। এখন বোঝেক ঠ্যালা। ঐ রাজনের হাতে বউয়ের প্যাট হইল। এইবার বউয়ের পেট থাকিয়া জারুয়া ছাওয়া বেরকেবার জইন্যে তোক হাসপিটাল যাবার নাগিল।'
'তোমরা সত্যি আও করেছেন এ্যাইলা? সুমিতা বুবু?'
'মুই তোমাক কীসের জইন্যে মিছা কথা কইম বইন। হামরা গরীব মানুষ, হাতে মিলাই পেটে খাই। হামরা যেইটা শুনি সেইটায় কই বইন। মুই সরিষার দানা পরিমাণ কথাও বাড়ে না কঁও তোমাক।'
'তোমরা আসল ঘটনাটা মোক এ্যানা খুলি কনতো। ক্যানে এ্যাইলা কথা ঘুরি বেড়াছে।'
'তোমরা তো জানেন, রাতুলের বিয়াও হবার ম্যালাদিন হইছে।'
'হ্যাঁ, মুই জানো। মোর মুখের আগোত ওমার বিয়াও হইল।'
'বিয়ার ম্যালা দিন হইল। কিন্তুক ওমার কোনো বাচ্ছাকাচ্ছা হয় না। এইজইন্যে দেশোত ঢেইল্লা ডাক্তারের গোরোত চিকিৎসা কইল্লে। কত দাওয়াই, কত মাহান-গুনিক আর কত ঔষধ ফুরি গেইল। তবু ওমার বউ পোয়াতি হইল না। এ্যারপর এ্যান্ডিয়া গেইল। কলিকাতাত গেইল। তবু রাতুলের মাইয়া পোয়াতি হইল না।'
'পোয়াতি হয় নাই ঠিক আছে। কিন্তু ঐঠে নাকি কিবা ঔষধ দিবার চাইছিল। ঐ দাওয়াই খাইলে নাকি মাসিক বন্ধ হয়য়া রাতুলের বউয়ের প্যাট হইল হয়। তখন বেলে এমার টাকা শর্ট পইছে। এইজইন্যে ঔষধ খাবার পারে নাই।'
'ঔষধ নোহায় বইন। টেসটিউব বেবি না কি বেলে কয়? ওইলা করির চাইছিল। ডাক্তার কইছে, অইন্য পুরুষের বীর্য নিবার লাইগবে। রাতুলের বীজ দিয়া নাকি হইবে না। এইজইন্যে রাতুল রাগ হয়য়া মন খারাপ করিয়া অর বউক ধরি চলি আইছছে।'
'রাতুলোক দিয়া হইবে না। তাহইলে এ্যালা কেমন করিয়া হইল?'
'এইঠে রহস্য বইন, এইঠেগিনায় রহস্য। ঐ যে রাজনের কথা কছুনু। অয় দেইখতে শুইনতে ভালো। আও করে হাসি হাসি মুখে। অখে সুযোগ করিয়া দিছে রাতুলের মাও নিজে।'
'ছিকো ছিকো ছিকো! এ্যাইলা কেমন করিয়া হয়। এই কথা শুনিয়ায় তো মোর বমন আইসেছে।'
অনেকক্ষণ মাথা নীচু করে থাকল মৌরিয়া। সামান্য সময় পরে আবার কথা বলতে আরম্ভ করল সুমিতা। বলল, 'রাতুলের মাও আছে না? ঐ বুড়ি মাগি খুব খারাপ। রাতুল কলিকাতাত থাকিয়া ঘুরি আসিয়া যখন কইল অনেক টাকা লাইগবে। তখন বুড়ি কইল, অত টাকা হামরা খরচ করিবার পারোমো না। মুই অইন্য ব্যবস্থা করিম।'
একটু থেমে সুমিতা বলল, 'তোমরায় কওছিনি, ওমার কি টাকার অভাব হইছে? এত জমিজমা কায় খাইবে? বুড়ি যখন জানিবার পাইরলে, অর বেটার বীজ দিয়া বাচ্ছা হইবে না, তখন থাকিয়া রাজনের সাথে দহরমমহরম শুরু কইল্লে। যখন তখন রাজনকে ডাকায়। এইটা-ওইটা খাবার দেয়। পুতুলের সাথোত মিশিবার কয়। রাতুল কোনোঠে বেড়েবার গেইলে বুড়ি রাজোনোক ডাকে নেয়। কয়, বাবা রাজন। আইজ রাইতোত তুই হামার বাড়িত থাকিস তো এ্যানা। রাতুল নাই। আইজ আসিবে না। এইজইন্যে মোক খুব ভয় নাগেছে। রাজন চ্যাংরা মানুষ। অরে বা দোষ কী? অইভাবে থাইকতে থাইকতে একসময় আসল ঘটনা ঘটি গেইছে। রাতুলের বউয়ের প্যাট হইছে। আইজ হাসপিটাল গেইছে ছাওয়া হবার জইন্যে।'
সুমিতার কথা শুনে প্রথমদিকে খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগছে না মৌরিয়ার। লজ্জা কেটে গেছে। এবার সাবলীলভাবে জিজ্ঞেস করল, 'তোমরা এ্যাইলা কারঠেনা শুইনলেন?'
সুমিতা উত্তরে বলল, 'চিকনা বুড়িমা আছে না? ঐ বুড়িমা সউগে শুইনছে। নিজকানে। একদিন সইন্ধ্যার সময় চিকনা বুড়িমা ওমার বাড়ি গেইছিল। য্যায়া দেখে, রাজন আর রাতুলের মাও ফিসফিস করিয়া আলাপ করেছে। তখন বুড়িমা ওমার গল্প আড়ালোত থাকিয়া শুইনছে। রাতুলের মাও ঐ বুড়ি মাগি কয় কী! রাজন। তোক মোর খুব পছন্দ হইছে বাবা। তুই এক রাইত হইলেও মোর বউটার বিছিনাত থাকিস। তোর দাঁড়ায় মোর ব্যাটার বউটার জোন একটা ছাওয়া হয় বাবা। এইটা কথা ফির তুই কারো আগোত কইননা।'
'বুড়ির কথা শুনিয়া রাজন কী কইছোলো?' জিজ্ঞেস করল মৌরিয়া।
'কী আর কইবে? চ্যাংরাগিলার যত ঢং। সাধু সাজিবার চায়। বুড়ি মাগিক কইল, তোমার দোহাই লাগে বড়মা। তোমরা মোক এ্যাইলা কাম করিবার কননা। উপরওয়ালা বেজার হইবে। পাপ হইবে। সোবায়খে নরক যাবার লাইগবে। কিন্তু পরে তো ঠিকে ঐ কাম কইচছে। না হইলে কি আর রাতুলের বউ পোয়াতি হয়?'
এ পর্যন্ত ঘটনা সত্য। রাতুলের মা রাজনকে এ কাজে রাজি করানোর জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাজন কোনোভাবেই রাজি হয়নি। রাজনের মধ্যে পাপবোধ কাজ করেছিল। তাছাড়া কোনক্রমে যদি কথাটা বের হয়ে যায়, অথবা গোপন না থাকে তখন কী হবে? সমাজ কী করবে ? পরিবারের সদস্যরা কী বলবে? এ সকল চিন্তা করে রাজন কঠিনভাবে সংযত করেছিল নিজেকে। অপরদিকে রাতুলের মা ভেবেছিল, টেস্টটিউব বেবি নেওয়া আর অপর কোনো পুরুষের সাথে সহবাস করে বাচ্চা নেওয়ার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। উভয়ক্ষেত্রে বীর্যটা হলো অন্য কোনো পুরুষের। যেহেতু রাতুলের বীর্য দিয়ে প্রেগন্যান্সি সম্ভব নয় সেহেতু কারো না কারো সিমেনস ব্যবহার করতেই হতো। তবে টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা একটু আলাদা। নারী-পুরুষের মধ্যে সরাসরি শারীরিক মিলন ঘটে না। অর্থাৎ একটি পদ্ধতিতে পুরুষের মাধ্যমে সিমেনস সরাসরি স্ত্রীর ভেতরে প্রবেশ করে। আর অপর পদ্ধতিটিতে পরোক্ষভাবে টেস্টটিউবের মাধ্যমে সিমেন্সের নিষেক ঘটিয়ে স্ত্রীর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। আবার টেস্টটিউব পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশি। কিন্তু সহবাসের মাধ্যমে কোনো খরচ নেই। কারো মাধ্যমে করিয়ে নিতে পারলেই হলো। সেক্ষেত্রে খরচের টাকাটাও বেঁচে যায়। মূলত এজন্যই অর্থাৎ টাকা বাঁচানোর জন্যই রাজনকে রাজি করানোর খুব চেষ্টা করেছিল রাতুলের মা। কিন্তু রাজনকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।
রাজনের সাথে মেলামেশা না করেও যে পুতুলের মিনসট্রেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাতে খুব অবাক হয়েছিলেন তার শাশুড়ি। তার শাশুড়ি হয়তো ধরে নিয়েছিলেন, বউমা অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটিয়েছে। তা না হলে মিনসট্রেশন বন্ধ হতেই পারে না। তবে এটা নিয়ে রাতুলের মা দৃশ্যত কোনো প্রকারের সন্দেহ পোষণ করেননি। বরং তিনি এমনই নীরবতা পালন করেছিলেন যে, মনে হয় বিষয়টি নিয়ে তার কখনো কোনো দিন কোনো চিন্তা ছিল না।
এদিকে রাজন এ খবর শুনার পরে এরকম সন্দেহ করতে লাগলেন যে, সে নিজে এ কাজে সম্মত না হওয়ায় রাতুলের মা হয়তো অন্য কাউকে দিয়ে এটা করিয়ে নিয়েছেন। কেননা, রাতুলের মা বুড়ি হলে কী হবে, চালচলনে অনেক স্মার্ট ও চতুর।
হাসপাতাল যাওয়ার পথে একবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল পুতুল। অনেক চেষ্টার পরে জ্ঞান ফিরেছে। রাতুলকে বেশ বকাবকি করেছেন ডাক্তার। কেন এত দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো রোগীকে? এ কথা বারবার করে বলছিলেন ডাক্তার ও তাঁর সহকারীরা।
যাহোক, রাতুলরা প্রেগন্যান্সির কথা বললেও পুতুলের রোগের লক্ষণ এটা বলছে না। ডাক্তার চোখের দেখা ও আপাত কিছু লক্ষণ দেখে বললেন, 'রোগী প্রেগন্যান্ট নয়। রোগীর পেটে গোটামতো কিছু একটা আছে। এজন্য পেট ফুলেছে। আপনারা নিশ্চিত থাকেন এটা কোনোভাবেই প্রেগন্যান্সি কেস নয়। ঐ গোটা বা টিউমারের কারণে হয়তো মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে।'
ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর বেশ কিছু টেস্ট করা হলো। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন, 'পেশেন্টের পেটে বিশাল একটি টিউমার হয়েছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। অপারেশন করলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।'
ডাক্তারের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল রাতুল। নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারল না সে। এজন্য পুনরায় ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল। একই উত্তর দিলেন ডাক্তার সাহেব। এভাবে পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞেস করেও ডাক্তার সাহেব যখন একই কথা বললেন, তখন ভীষণভাবে ভেঙে পড়ল রাতুল। রাতুলের মা কেবিনের একপাশে একটা চেয়ারে বসে মাথা নীচু করে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর নরম সুরে বলল, 'এটাই তাহলে কপালে ছিল আমার!'
নানান রকম কথা রাতুলের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। পুতুলের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। পুতুল বলতো পেটের মধ্যে কী যেন নড়াচড়া করছে। এসব কি তাহলে মিথ্যা? মায়া এসব? সব তাহলে প্রতারণা? তাছাড়া, স্ট্রিপ দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে যে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছিল। এটাও তাহলে মিথ্যা? বিজ্ঞানও প্রতারণা করে মানুষের সাথে? এসব ভাবতে ভাবতে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল রাতুল।
মন্তব্য করুন: