বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না
  • পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে দোহা থেকে রোমে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • আইসিটির দুর্নীতি তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রণয়নে টাস্কফোর্স
  • তুরস্ক ও আমিরাত সফরে প্রধান বিচারপতি
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ
  • দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে
  • নতুন দল নিবন্ধনে সময় বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি
  • অতিরিক্ত হর্ন বাজানো শুধু আইন লঙ্ঘন নয় আচরণগত অবক্ষয়ও
  • ঢাকায় আসছেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
  • মার্কিন সহায়তা হ্রাসে আরও জটিল হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট

যুক্তরাজ্যে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পদের সন্ধান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ্যে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ বেশ কয়েকজনের যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে তারা ৪০ কোটি পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) বেশি পরিমাণ অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। আর এই অর্থের পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।

এর আগে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবজারভার (দ্য গার্ডিয়ানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) ও বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে যৌথ অনুসন্ধান চালায়।

এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা (ম্যানশন) পর্যন্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও দেশটির বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (অফশোর কোম্পানি) নামে এই সম্পত্তির বেশিরভাগ কেনা হয়েছে।

অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ওই সম্পত্তির অনেকগুলোর মালিকানায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অনেক সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালমানের পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বা মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা। এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান। সেখানে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে কেনা তার একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এ ছাড়া গ্রোসভেনর স্কয়ারে এবং এর কাছাকাছি এই পরিবারের আরেক সদস্য আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের আরও চারটি সম্পত্তি রয়েছে। এর মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা।

এ বিষয়ে শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের আইনজীবীরা বলেছেন, মানি–লন্ডারিং আইনসহ আর্থিক বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে মেনেই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে দেশে কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের ৩০০টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড।

এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বৈশ্বিক সম্পত্তি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে থাকা সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এ ছাড়া তার ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

একইসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। পাশাপাশি অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজনীতিবিদদের বাইরে বাংলাদেশের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরও যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের দুটি সম্পত্তি রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকাটি পরিদর্শনের সময় আহমেদ আকবর সোবহানের এক ছেলের মালিকানাধীন একটি অট্টালিকার সন্ধান পেয়েছে অবজারভার।

আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের ওপর গত ২১ অক্টোবর সরকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়া তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে সিআইডি। দেশটিতে তার সম্পত্তিও জব্দ করা হয়েছে। লন্ডনের কেনসিংটনে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে ৩ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি কিনেছেন তা খতিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় অন্তর্বর্তী সরকার। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতির কারণে হারিয়ে যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বিগত সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন এমন অনেকেরও বিপুল সম্পত্তির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তাদের অনেকে বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। পাচার করা সেই অর্থের কিছু গন্তব্য হয়েছে যুক্তরাজ্যে।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর