মঙ্গলবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন
  • কক্সবাজার বিমানঘাঁটিতে হামলা নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর
  • সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথবাহিনীর প্যাট্রলিং
  • বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ ৪ মহাসড়ক ও আট সেতুর নাম পরিবর্তন
  • তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
  • রমজানে অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
  • ছিনতাইরোধে মাঠে নামবে পুলিশের ৩ বিশেষায়িত ইউনিট
  • বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে শাসন কাজ পরিচালনা সহজ নয়
  • পদত্যাগের আলটিমেটাম নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২ ডেডলাইন দিয়েছে

ছোট গল্প

বৃষ্টিধারা ও একগুচ্ছ কদমফুল

মোঃ মোশফিকুর রহমান

প্রকাশিত:
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৮

সচরাচর মোংলার আকাশে মেঘ থাকলেও বৃষ্টির দেখা তেমন একটা পাওয়া যায়না! কিন্তু আজ হঠাৎই দুপুর দু'টোর পরে আকাশটা ঘনকালো মেঘে ছেয়ে আসলো! মনে হয় একটু পরেই নেমে আসবে এক পশলা বৃষ্টি। প্রচন্ড দাবদাহের পরে একটু শিতল হাওয়ায় মনটা একটু ফুরফুরে হলো, এবার যদি রহমতের বৃষ্টি নামে!

দেখতে দেখতে ঝিরঝির করে বৃষ্টিধারায় ভিজতে শুরু করল চারপাশ। মনটা এক অচেনা উন্মাদনায় আনচান করতে শুরু করলো! কেন জানি মনে হচ্ছে আজকের বৃষ্টিধারাটা একটু অন্যরকম! বারংবার মনটা ছুটে চলছে বৃষ্টিধারায় ভিজে একাকার হতে, মনে হচ্ছে এই বৃষ্টিধারার সাথে আমার জন্মান্তরের পরিচয়! এই রিমঝিম বৃষ্টিধারায় কতবার ভিজছি। কিন্তু সর্বশেষ কবে কোথায় ভিজেছিলাম ঠিক মনে পড়ছেনা। তা প্রায় সাত-আট বছর তো হবেই।

একটা সময় প্রচুর বৃষ্টিতে ভিজতাম, ভিজে ভিজে সারা শহর দাপিয়ে বেড়াতাম। এখন আর আমার বৃষ্টিধারা ভালো লাগেনা, বৃষ্টি এলে মনের মধ্যে অজানা এক হাহাকার এসে গ্রাস করে। তখন কোনোকিছুই আর ভালো লাগেনা। ভালো লাগবেই বা কি করে, যার হাতটা ধরে শত মাইলের পর মাইল ঘুরতাম সেই বনলতাই যখন পাশে নেই; তখন এ বৃষ্টিধারা দিয়ে কী হবে!

এখনো আমার মনে পরে তখন আমি দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্সে পরতাম, বনলতা আমার থেকে দু ইয়ার জুনিয়র! জানিনা কিভাবে যেনো দু'মেরু হতে দু'জন এক হয়েছিলাম! দুজনেরই বৃষ্টিধারা অনেক পছন্দের ছিলো। আকাশে একটু মেঘ করলেই বনলতা ফোন করে বলতো, কবি আকাশে কালো মেঘ করেছে; তুমি কী আমাকে সাথে নিয়ে বৃষ্টিধারায় ভিজবে? চালো না আজ দু'জন শতাব্দীর সেরা বৃষ্টিধারায় একার হয়ে মিশে যাই! আমি এক মনেই আমার রেঞ্জার সাইকেলটা নিয়ে সোজা তার মেসের সামনে একগুচ্ছ কদম ফুল নিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম। বনলতা আমার প্রিয় নীল শাড়ি পরে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতো আর আমি অপলক চোখে তার পানে চেয়ে থাকতাম। একসময় সে আমার সামনে এসে মুচকি হাসি দিয়ে বলতো

কী কবি এভাবে তাকালে আমার বুঝি লজ্জা করেনা!

আমি তার শুভ্র হাতে কদমফুলগুলো দিয়ে বলতাম "ভালোবাসি,ভালোবাসি! "

সে মুচকি হাসি দিয়ে বলতো, আর বলতে হবেনা! আমি তো জানি তুমি আমাকে তোমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাস।

তারপর দু'জনে সাইকেলে চেপে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যেতাম। কখনো রামসাগর, কখনো মাথা সাগর, কখনো বা রাজবাটী যেতাম। সে রাজবাটী গেলে প্রায়ই আমার কোলে মাথা রেখে বলতো আচ্ছা কবি যদি তুমি অনেক টাকার মালিক হও, তাহলে তুমি কি আমাকে এ রকম একটা রাজপ্রাসাদ গড়ে দিবে? আমি শুনতাম আর মুচকি হাসতাম।

রামসাগরে গেলে বলতো এ রকম একটা সাগর এনে আমাকে উপহার দেবে? আমি সাহস করে বলতাম তোমাকে এর চেয়েও বড় রাজপ্রাসাদ, এর চেয়েও বড় সাগর এনে দিবো।

আজ অনেক দিন হলো বনলতার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই! তার কাছের কেউ একজন বলেছিল সে বিয়ে করে এখন অনেক সুখে আছে! তাই হয়তো এখন আর আমার বৃষ্টিধারায় ভিজতে মন চায় না! জানিনা বনলতাও আমার মতো এখন বৃষ্টিধারা অপছন্দ করে কিনা! সেকি এখনো সেদিনের মতো তার নতুন সঙ্গীর হাতেধরে বৃষ্টিধারায় ভিজে, তার প্রেয়সীও কি আমার মতোই বৃষ্টিতে ভিজে তাকে একগুচ্ছ কদমফুল এনে দেয়? নাকি সে এখন প্রিয় কদলফুলের ঘ্রাণটাও অপছন্দ করে!

আমি অনেক দিন বৃষ্টিধারায় ভিজিনি, নেওয়াও হয়নি কদমফুলের ঘ্রাণ। প্রায় ভুলেই বসেছিলাম এর অপরূপ রূপ ও গন্ধ। কিন্তু আজ এই বৃষ্টিধারা আমাকে এভাবে কাছে টানছে কেন! মনে হচ্ছে এ বৃষ্টিধারা আমার জনম জনমের চেনা। বারবার মনে হচ্ছে যদি একগুচ্ছ কদমফুল পাওয়া যেতো! সেই ফুল নিয়ে নির্জন রাস্তায় চলা যেতো, কিন্তু কোথাও কদমফুলের গাছ আছে কিনা জানিনা!

আজকের মতো কাজ শেষ, তাই কাইনমারী ব্রীজের পাশদিয়ে বয়েচলা মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ধিরে ধিরে হোন্ডাটা চালাচ্ছি আর পশুরনদীর সৌন্দর্য ও বৃষ্টিধারা উপভোগ করছি! দেখছি আমার মতো অনেকেই বৃষ্টিধারায় ভিজতে এসেছে! তবে সকলেই জুটি বেধে একমাত্র মনে হয় আমিই একাকী!

ধিরেধিরে হোন্ডাটা নিয়ে সিগন্যাল টাওয়ার চরকানার বস্তির কাছে চলে আসলাম, এখানে নদীর পাড়ে অনেকগুলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ট্রলার বাধা। হোন্ডাটা রাস্তার পাশে রেখে একটায় চরে বসলাম! নদী পুরোই জোয়ারে ভরাট হয়ে আছে, পাশদিয়ে ছোট ছোট নৌকা ও কার্গো জাহাজ যাচ্ছে। দৃশ্যগুলো সত্যিই মনোমুগ্ধকর তবুও আজ অন্য কিছুর টান অনুভব করছি, ঠিক বুঝতে পারছিনা।

হঠাৎই দূরের কৃষ্ণচূড়ার গাছটার দিকে দৃষ্টি পড়লো, ওখানে নীল শাড়ি পরে কোনো এক রমনী একাকী বসে আছে। চুলগুলো ভিজে একাকার, সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই, এক দৃষ্টিতে সামনে চেয়ে আছে। মনে হয় মেয়েটি তার প্রিয়জনকে হারিয়ে বিমুর্ষ তাই আমার মতোই একাকী নদীর ধারে বৃষ্টিধারায় ভিজতে এসেছে।

আমার কেনো জানি দৃষ্টি বারবার দূরে বসা মেয়েটার দিকেই যাচ্ছে। জানিনা অচেনা মেয়েটি কেন এভাবে আমার দৃষ্টি কাড়ছে।

আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয় মেয়েটার পাশে গিয়ে যদি জিজ্ঞেস করা যায়, একাকী এই বৃষ্টিধারায় ভেজার কারণ। তার ভিতরের কষ্টাটা যেমন একটু কমবে, তেমনি আমারও। দুজনের কষ্টগুলো যদি শেয়ার করা যেতো!

আচ্ছা মেয়েটা অন্যকিছু ভাববেনা তো! তবুও আমি গুটিগুটি পায়ে সাহস নিয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আর অবাক হচ্ছি পরিচিত একটা গন্ধে! আশপাশে কোথাও কদমগাছ নেই কিন্তু কোথা হতে যেনো কদমফুলের ভেজা গন্ধ ভেসে আসছে। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে সাড়া দিলাম এই যে শুনছেন? মেয়েটি আমার পাশে ঘুরতেই বজ্রপাত নেমে আসলো, এ যে আমারই বনলতা! পরনে নীল শাড়ি, হাতে একগুচ্ছ কদমফুল! সেই চিরচেনা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, এতো দেরি করলে কেন; আমি রোজ বৃষ্টিধারায় তোমার জন্য অপেক্ষা করি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর