প্রকাশিত:
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০২
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের একটি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে গিয়ে বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। আহতদের ঢাকা ও নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যান।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভোররাত ৪টার দিকে শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীনলীফ ফিলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই মাস আগেও এই ফিলিং স্টেশনে অন্য একটি বাসে একই দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনজন মারা যান। আহত হন ২০ জন।
ঘটনাস্থলে নিহত শ্রমিক আবুল কালাম পৌরসভার সাহাপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে। তিনি ওই ফিলিং স্টেশনের পাশে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। অপর নিহত রুবেল হোসেন জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের জমিদার হাট এলাকার শাহাবুদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই বাসের মালিক এবং চালক। আহত অন্যরা হলেন- আবুল হোসেন ও নাইম উদ্দিন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এদিকে দূর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ডিসি।
অপরদিকে একাধিকবার এমন দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, বাসের সিলিন্ডারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। সিলিন্ডারের মেয়াদ যাচাই-বাছাই না করেই গ্যাস রিফিল করা হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে গ্রীনলীফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আল আমিন দাবি করেন, যে দুই বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ রয়েছে।
ফিলিং স্টেশন ম্যানেজার, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে গ্রীনলিফ ফিলিং স্টেশনে আল মদিনা পরিবহন নামে একটি বাস গ্যাস নিতে আসে। এ সময় বাসের সিলিন্ডারে গ্যাস ঢোকানোর সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এতে চারদিকে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে গেলে স্টেশনে থাকা সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা ছোটাছুটি করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান ওয়ার্কশপ শ্রমিক আবুল কালাম। আহত হন তিনজন।
পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ আল মদিনা পরিবহন নামে একটি বাস ফিলিং স্টেশনে এসে লাইনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি গ্যাস নিতে চলে যায়। এ সময় পাম্পের অপারেটর বাসের গ্যাস সিলিন্ডারে গ্যাস দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা আরও জানান, আল মদিনা নামের ওই বাসটি শহরের ঝুমুর এলাকায় রং এর কাজ শেষে ওই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে আসে। এ সময় রংমিস্ত্রি আবুল কালাম বাসেই ছিলেন। সেখানেই বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। তিনজন আহত হয়। অহতদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী নেওয়ার পথে মারা জান। বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন বলেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটনাস্থলে একজন মারা যান। আহতদের মধ্যে দুজনের পা ও একজনের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি, এতে যদি কারও ক্রুটি পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রায় দুই মাস আগেও এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন তিনজন মারা গেছেন। আমরা তখন তদন্ত করে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারের প্রমাণ পেয়েছি। আজকের ঘটনায়ও আমরা পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করব। কেউ দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কে যেন ফিটনেসবিহীন কোনো পরিবহন চলাচল করতে না পারে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাতে এই গ্যাস পাম্পে মেঘনা পরিবহন নামে একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সদর উপজেলার চরমনসার বটু মিয়ার ছেলে সুমন হোসেন, বাঞ্ছানগর এলাকার সুজা মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া ও হৃদয় হোসেনসহ তিনজন মারা যায়। এ সময় আহত হয় ২০ জন। এই নিয়ে গত দুই মাসে এই গ্যাস পাম্পে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
মন্তব্য করুন: