প্রকাশিত:
১৫ আগষ্ট ২০২৩, ১১:৩২
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ খুনিকে এখনো দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পলাতক ৫ খুনি দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন দেশে তাদের অবস্থান বদল করেছে।
সে কারণে ৩ খুনির অবস্থানই জানতে পারছে না সরকার।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এখন ৫ জন বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। এই ৫ খুনি হলো—খন্দকার আবদুর রশিদ, এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে এম রাশেদ চৌধুরী। আর কানাডায় অবস্থান করছে খুনি নূর চৌধুরী। বাকি তিন খুনির কোনো হদিস নেই।
বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও শনাক্ত করতে পারেনি সরকার। একাধিক সূত্রের খবর, খুনি শরিফুল হক ডালিম বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্পেন ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছে। ডালিম পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে সে দেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে এই খুনির অবস্থান জানতে পারছে না সরকার।
খুনি খন্দকার আব্দুর রশিদ বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে অবস্থান করেছে। পাকিস্তানে তার অবস্থান জানতে পেরে পাকিস্তান সরকারের কাছে তার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খানকে সর্বশেষ জার্মানিতে দেখা গেছে। তার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জার্মান সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। সে বিভিন্ন সময়ে ভারত ও পাকিস্তানে পালিয়ে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান জানে সরকার। এর মধ্যে খুনি এম রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে খুনি এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরকালে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরী অবস্থান করছে কানাডায়। তাকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ড নেই। সে কারণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেয় না কানাডা। এই আইনি জটিলতা নিরসন করে খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ দীর্ঘ ২০ বছর ভারতে পালিয়ে ছিল। ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসার পর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। একই বছর ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।
বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনি আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুন মাসে জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায় মারা যায়। তবে তার মৃত্যুর বিষয়ে প্রকৃত তথ্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
৫ খুনিকে দেশে ফেরাতে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তবে কাউকেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যেসব দেশ মানবতার কথা বলে, আইনের শাসনের কথা বলে তারাই বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফেরত দিচ্ছে না। এটা তাদের জন্য লজ্জার আর আমাদের জন্য দুঃখজনক। অপর তিন খুনির অবস্থান জানার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই ৫ জন হলো— সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
মন্তব্য করুন: