মঙ্গলবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সন্ধ্যার পর থেকেই টের পাবেন
  • কক্সবাজার বিমানঘাঁটিতে হামলা নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর
  • সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথবাহিনীর প্যাট্রলিং
  • বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েসহ ৪ মহাসড়ক ও আট সেতুর নাম পরিবর্তন
  • তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
  • রমজানে অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
  • ছিনতাইরোধে মাঠে নামবে পুলিশের ৩ বিশেষায়িত ইউনিট
  • বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে শাসন কাজ পরিচালনা সহজ নয়
  • পদত্যাগের আলটিমেটাম নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ২ ডেডলাইন দিয়েছে

দুগ্ধ শিল্পের স্বর্গ শাহজাদপুরের বিস্তীর্ণ বাথানভূমি

মোঃ রায়হান আলী, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১২

এককভাবে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গোচারণভূমি হিসেবে বিবেচিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বিস্তীর্ণ বাথানভূমি।

প্রায় দেড় হাজার একরজুড়ে বিস্তৃত এই বাথানের পত্তন হয়েছিল বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। এই বাথান ভূমিকে ঘিরেই দেশের মোট দুধের ৬০ভাগ সরবরাহ করে থাকে শাহজাদপুর অঞ্চলের খামারীরা। আর দুগ্ধ শিল্পের কারণে এ অঞ্চলের খামারীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়েছেন। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ কাঁচা ঘাসের সমুদ্র। মাঝখান দিয়ে শিরা-উপশিরার মতো বয়ে চলা ধলাই, গোহালা নদী, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাল-বিল, গবাদিপশুর পাল, জায়গায় জায়গায় খড়-বাঁশ-টিনের অস্থায়ী খামার।

নিচু এলাকার বাথানভূমিটি বছরের প্রায় ৫ মাসের বেশি সময় থাকে জলের তলায়। সে সময় খামারিরা পশুর পাল বাড়িতে বা উঁচু জায়গায় স্থানান্তরিত করে। তারপর শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ফের শুরু হয় গবাদিপশুর কোলাহল। তৃণময় বাথানভূমির মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে গবাদিপশুর পাল। ফ্রিজিয়ান, শাহিয়াল গরুগুলোর বাটভর্তি দুধ এবং বিস্তৃত এ চিরসবুজ বাথানভূমি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের গোচারণভূমির ভূমির কথা মনে করিয়ে দেয়।

তাই অনেকেই শাহজাদপুরের বাথানভূমিকে বলে থাকেন#৩৯;বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড্#৩৯;। বাথানভূমির সিংহভাগ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায়, আর বাকি অংশ পড়েছে পাবনা জেলায়। আগে বাথানভূমিটি মোটামুটি ১৬০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত থাকলেও বর্তমানে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ১০৩৩ একরে।

মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, বাথানভূমির প্রায় ৫০০-৬০০ একর জায়গা ভূমিদস্যুরা জাল দলিল, ভুয়া পত্তনি, বেদখল, অবৈধ ইজারার মাধ্যমে দখল করেছে।

শাহজাদপুর বাথানভূমির রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। জায়গাটি বাথানভূমি হিসেবে পরিণতি লাভের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে মানুষটি প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন শাহজাদপুরের ভূতপূর্ব জমিদার বাবু শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেকালে শাহজাদপুরের অন্তর্গত পোতাজিয়ায় ঘোষ সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল এক সমৃদ্ধ দুগ্ধনগরী। রবীন্দ্রনাথ ঘোষদের ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে দুধ, মাখন, ছানা, ঘৃত প্রভৃতি কিনে কিছু কলকাতায় পাঠিয়ে দিতেন, আর কিছু নিয়ে আসতেন কাছারিতে। শাহজাদপুরের দুগ্ধজাত পণ্যাদি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের রসনাতৃপ্তির মাধ্যমে পরিণত হয়েছিল।

ঘোষদের মধ্যে অন্যতম গিরিশচন্দ্র ঘোষ গোচারণভূমির অভাবে রবীন্দ্রনাথের কাছে কিছু নিষ্কর ভূমি চান। বাংলা ১৩০২ সনের ২৯ চৈত্র মোক্তা ৫০০ টাকায় বিভিন্ন মৌজা থেকে গিরিশ ঘোষকে ১৯২ বিঘা জমি দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ ঘোষদের রাউতারার পার্শ্বস্থ বুড়িপোতাজিয়া ও রামকান্তপুর মৌজার বিস্তৃত ভূমি গোচারণের জন্য লাখেরাজ দান করেন। সে জমিগুলোতেই আনুষ্ঠানিকভাবে সৃষ্টি হয় বাথানভূমি। রবীন্দ্রনাথ ভারতের তৎকালীন পুনে ভেটেরিনারি স্কুল/ইন্সটিটিউট থেকে উন্নতজাতের সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা গরু নিয়ে এসে সংকরায়নের ব্যবস্থাও করেন। বাথানভূমি শুধু সরকারি জায়গার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে চারভূমির বাথানের সংখ্যা শতাধিক।

পুরো বাথানভূমিতে দুগ্ধ গরুর সংখ্যা রয়েছে বিশ হাজারেরও বেশি। একসময় দেশি গরুর দুধ হতো ২.৫-৩ লি. যা এখন দাঁড়িয়েছে ১৫-২০ লিটারে। বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় প্রতিদিন গড়পড়তা দুধ জমা হয় প্রায় ৮০,০০০-৯০,০০০ লিটার। যার একটি বড় অংশ আসে বিভিন্ন বাথান থেকে। বাথানভূমির সুরক্ষার জন্য এর আশেপাশে বড় কোনো শিল্প-কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ। বাথানভূমি থেকে বর্ষার পানি নেমে গেলে জমিগুলোতে পলি পড়ে। স্থানীয় কৃষিজীবী বাথানি সম্প্রদায় কাদাপলির ওপরে মাসকালাই ও খেসারির বীজ ছিটিয়ে দেয়। শীতে এসব মাসকালাই ও খেসারি লতা গবাদিপশুর খাদ্যে পরিণত হয়। চলন বিলের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত বিস্তৃত বাথানভূমি প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাক্ষেত্র। বাথানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই ও মৃতপ্রায় গোহালা নদী।

আর এ নদী পথেই ট্রলারযোগে বাথান থেকে হাজার হাজার লিটার দুধ মল্কিভিটায় প্রেরণ করা হয়। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে পুরো ১৬০০-১৭০০ একর জায়গা উদ্ধার করে মিল্কভিটার মাধ্যমে সমবায়ী দুগ্ধ খামারিদের ইজারা লাভের ব্যবস্থা করা হয়। মিল্কভিটার সুপারিশ অনুসারে এসি (ল্যান্ড) অফিস বিভিন্ন প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতিকে বাথানভূমি ইজারা দেয়।বাথানের বড় খামারী খলিল মোল্লা বলেন, আমার ৫০টি দুগ্ধ গাভী দুধ দিচ্ছে।

মিল্কভিটায় সে দুধ সরবরাহ করছি। এখানে অস্থায়ী বসতি গড়েছি। ৪/৫জন কৃষান নিয়িমিত পরিচর্যা করছে। গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় খরচের তুলনায় দুধের নায্য মূল্য পাচ্ছিনা। বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি.-এর (মিল্কভিটা) সাবেক পরিচালক বাবুল আক্তার জানান, শাহজাদপুরের বাথানভূমি দেশের সবচেয়ে বড় গো চারণভূমি। এখানকার খামারিরা সরকারকে বাৎসরিক খাজনা প্রদানের মাধ্যমে বাথান ল্যান্ডের জমি ভোগ করে।

মিল্কভিটা প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলোর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ দেখে তাদের নামে জমি সুপারিশ করে। তবে এখানে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। যেমন, জমি গ্রহণ করলে সেটা বদলানো যাবে না, কোনো সমিতি তাদের লিজের জমি অন্য কাউকে লিজ বা সাব-লিজ দিতে পারবে না, ঘাস ছাড়া অন্য কোনো ফসল বাথানভূমিতে বোনা যাবে না।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর