বৃহঃস্পতিবার, ৩০শে জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ই মাঘ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সাবেক মেয়র আতিকসহ চারজন ফের রিমান্ডে
  • ট্রেন চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
  • রাজধানীতে ৩ পলিথিন কারখানা পুরোপুরি বন্ধ
  • সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনাম গ্রেপ্তার
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভারতের বিকল্প হতে পারে চীন
  • নির্বাচনের সময় এই সরকার যথেষ্ট নিরপেক্ষ থাকবে
  • আ.লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের অবস্থান জানালেন পরিবেশ উপদেষ্টা
  • র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
  • জরিমানা সাপেক্ষে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে ৩৬৫ দিনই 
  • পুলিশের কাজের মন্থরগতিই আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য দায়ী

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

একজন গণতান্ত্রিক নেতা ও স্বাধীনতার রক্ষক

মো: ফারুক আহম্মেদ

প্রকাশিত:
২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫০

১৯ জানুয়ারি আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন। তাঁর রাজনৈতিক ও সামরিক জীবনের বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, তাঁর অবদান শুধুমাত্র রাজনীতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করতে পেরেছে, তেমনি গণতন্ত্রের পথে একটি স্থায়িত্বশীল দিশা পেয়েছে। 

 

জিয়াউর রহমানের মূল অবদান

জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি যে ভূমিকা পালন করেন, তা কেবলমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য ছিল না; বরং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করার জন্য। এই বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি সামরিক বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একতা স্থাপন করেন এবং একটি নতুন দিশা দেখান।

তাহের ও কমিউনিজমের ফাঁদ

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তাহের একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন, যা অনেকটাই কমিউনিস্ট চেতনার সাথে মিলিত ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই পথে যাননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ব্যাহত করতে পারে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জিয়াউর রহমান তাহেরের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তিনি গণতন্ত্রের পথ বেছে নেন, যেখানে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়। আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তিনি গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করেন এবং জাতিকে একত্রিত করেন।

বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন এবং তাঁর বাকশাল নীতি ভেঙে পড়ে। এরপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেবলমাত্র একদলীয় নীতির ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারে না।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দল গণতন্ত্রের চর্চা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর সময়ে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তিনি বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেন, যার ফলে বাংলাদেশ নতুন দিশা পায়।

দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা রক্ষা

জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সৎ, নির্ভীক এবং দেশপ্রেমিক নেতা। তাঁর দেশপ্রেমের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে, যখন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য লড়াই করেন। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি আবারও প্রমাণ করেন যে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় তিনি আপসহীন।

অনেক রাজনৈতিক নেতা যখন বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেন, জিয়াউর রহমান তখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে বাংলাদেশ ছিল একমাত্র অগ্রাধিকার, যেখানে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধারণ করেছিলেন।

স্থায়িত্বশীল নেতৃত্ব

মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও জিয়াউর রহমানের শাসনামল আজও বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তাঁর শাসনামলে প্রবর্তিত ১৯ দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং তা ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। তাঁর সময়ে দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে যে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা এসেছিল, তা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।

উপসংহার

১৯ জানুয়ারি, তাঁর জন্মদিনে আমরা এই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তিনি শুধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দেননি, বরং তাঁর সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল, যা আজও জাতির জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

শুভ জন্মদিন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আপনি ছিলেন আমাদের জন্য সেই সৎ, নির্ভীক এবং সাহসী নেতা, যিনি দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন। আপনার অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।


অধ্যক্ষ, সরকারি শাহ এয়তেবারীয়া কলেজ, তালোড়া, বগুড়া 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর