প্রকাশিত:
২২ আগষ্ট ২০২৩, ১৪:২০
দেশে প্রতিদিন ডেঙ্গুজনিত জটিলতায় কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত গতিতে। সোমবার(২১ আগষ্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সচেতন হওয়া সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিকতার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। আমাদের জানতে হবে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আর এই জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু হল ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV) দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। যা এডিস মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে তিনি চার থেকে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে মশার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ডেঙ্গু ছড়ায়।
ডেঙ্গুজ্বর কখন হয়
সাধারণত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। বিশেষ করে বর্ষার সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। পুরানো টায়ার, লন্ড্রি ট্যাংক, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম, পোষা প্রাণীর পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনে ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান, বাঁশ, দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল, পুরনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে এডিস মশা জন্ম নেয়। এডিস মশা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থান, ডাবের খোল, ক্যান, টায়ার, ফুলের টবে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে।
লক্ষণ
১. ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। এর সঙ্গে দেখা দিতে পারে বমি, মাথাব্যথা ও শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা। ডেঙ্গু জ্বর শরীরকে অনেক বেশি দুর্বল করে দেয়।
২. ডেঙ্গুর হিমোরোজিক ফিভারের কারণে অনেক সময় রক্তক্ষরণও হয়। ৪-৫ দিন পর শরীরে র্যাশ বের হয়। এ ছাড়া দাঁত ব্রাশ করলে রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। অনেক সময় প্রস্রাব- পায়খানার সঙ্গেও রক্ত যেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডকালীন রক্তক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে হয়।
ঘরোয়া চিকিৎসা
১. সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। বিশ্রাম ছাড়া ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব।
২. জ্বর হলে খাবার গ্রহণে অরুচি হওয়াটা স্বাভাবিক। এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন: ডাবের পানি, ফলের জুস, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন।
৩. সংক্রমণ প্রতিরোধে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশারির বাইরে বের হলে ফুল হাতা পোশাক পরতে হবে। মোট কথা মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
করণীয়
১. জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে। জ্বর ছাড়ার ৪ থেকে ৫ দিনের মাথায় শরীরে র্যাশ, এলার্জি বা ঘামাচির মতো হতে পারে। জ্বর কমার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তীব্র পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি, নাক বা দাঁতের মাড়িতে রক্তক্ষরণ, যকৃত বড় হয়ে গেলে, মল কালো হলে কিংবা প্রসাব কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
২. ডেঙ্গুজ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। কিন্তু যারা হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আছেন। তাদের প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. ডেঙ্গুতে অনেকেই প্ল্যাটিলেটের হিসাব নিয়ে চিন্তা থাকেন। প্ল্যাটিলেট নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে তা চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
মন্তব্য করুন: