প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৮
এক সময়ের বাংলাদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল পাট গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এখনো কিছুটা মাথা উচিয়ে দাড়িয়ে আছে সেই সোনালী আশ। কিন্তু নিষিদ্ধ পলিথিন-প্লাষ্টিকে বাজার সয়লাবে বিনিষ্টের পথে পাটজাত দ্রব্য। এছাড়াও সিন্ডিকেট কবলে নায্যমূল্য না পেয়ে পাট চাষে অনীহা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তবে পরিবেশ বিপন্নকারী পলিথিন-প্লাস্টিক অপসারণ ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি না হলে পাটের অস্তিত্ব বিলীন হবে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী ও পাটচাষী সূত্রে জানা গেছে, কৃষি নির্ভর এই বাংলাদেশ। এদেশের বর্তমান অর্থকারী ফসল পাট, চা ও তামাক। অথচ এক সময় প্রধান অর্থকারী ফসল ছিল পাট। এ পাট বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন হতো। যার কারণে পাটকে সোনালী আশও বলা হতো। সেই ধারাবাহিকতায় কালিয়াকৈর উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাপক পাট উৎপাদন হতো।
মাঠে মাঠে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সেই সোনালী আশ। আবার উৎসব মুখর পরিবেশে পাট সংগ্রহ করতেন কৃষকেরা। সর্বত্র পাটের তৈরি বস্তা, চট, ব্যাগ, রশি, পাট খড়ির বেড়াসহ বিভিন্ন পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন ও সিন্ডিকেটের কবলে পরিবেশ বিপন্নকারী নিষিদ্ধ পলিথিন-প্লাস্টিকে বাজার সয়লাব।
এ কারণে বিনিষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার। আর পরিবেশের ক্ষতি করে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে অসাধু পলিথিন-প্লাষ্টিক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ফলে পাটজাত দ্রব্যের তেমন ব্যবহার না হওয়া ও নায্যমূল্য না পাওয়ায় দিন দিন প্রায় পাট চাষ উঠে যাচ্ছে। এরপরেও উপজেলার ঢালজোড়া, দেওয়ার বাজার, মহরাবহ, সাবাজপুর, গোসাত্রা, ডুবাইলসহ বিভিন্ন নিচু এলাকায় এখনো কিছু পাট চাষ করেন কৃষক। এর ধারাবাহিকায় এ উপজেলায় ২২২ একর পাট চাষ করা হয়েছে। যা কৃষি অফিসের চাহিদা অনুপাতে আশানুরোপ ভাবে হচ্ছে না পাটচাষ।
একেবারে বিলীন হওয়ার পথেও এখনো কিছুটা মাথা উচিয়ে দাড়িয়ে আছে সেই সোনালী আশ। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও কিছু কিছু পাটচাষ হলেও কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে হতাশায় চাষীরা। সরকারী বরাদ্ধ না থাকায় ও খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। কিন্তু এবছর নায্যমূল্য না পেয়ে পাট চাষে অনীহা প্রকাশ করছে কৃষক ও কৃষাণী। তবে অভিযানের মাধ্যমে বাজারে সয়লাব পরিবেশ বিপন্নকারী নিষিদ্ধ পলিথিন-প্লাস্টিক অপসারণ ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা। আর কৃষকের যৌক্তিক দাবী-দাওয়া মেনে নায্যমূল্যের বাজার নিশ্চিত না গেলে পাটের অস্তিত্ব বিলীন হবে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক আবুল বাশার, জিন্নত আলী, ফরিদ মিয়া, শুকুর আলী, আলাল উদ্দিন, রেজ্জু মিয়া, কমলা বেগমসহ আরো অনেকে বলেন, পাকিতে ৮-৯ মন পাট উৎপাদন হয়। পাটের দাম গতবছর ছিল প্রতি মণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর কমে প্রতি মণ পাটে দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। শ্রমিক মূল্যও বেশি ও নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থায় নায্যমূল্য না পেয়ে পাটে লোকসানে আছি। এখন পাটখড়ির কারণে চাষবাদ খরচ ও আয় প্রায় সমান হচ্ছে। তাহলে এতো পরিশ্রম করে লাভ কি? তাছাড়া সরকার থেকে পাটের কোনো বরাদ্ধও দিচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এখনো নিচু এলাকায় কিছু কিছু পাট চাষ হচ্ছে। তবে বরাদ্ধ না থাকা, পানির অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে পাটচাষ কমে যাচ্ছে।
অর্থকারী ফসল পাট হারিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারে জনসচেনতা বাড়াতে হবে। তবে পলিথিন-প্লাস্টিক বন্ধের আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া পাট চাষের জন্য সহযোগীতা চেয়ে কেউ আবেদন করলে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সেটা ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন: