প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:০৬
নেত্রকোণায় ৪৮৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ১০ টি পদের মধ্যে ৪ টি পদ শূন্য এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অর্ধেক পদই রয়েছে শূন্য। উচ্চমান সহকারী ১০ টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬ টি পদ। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১৮ টি পদের মধ্যে ৫ টি, হিসাব সহকারী ১০ টি পদের মধ্যে ৮ টি এবং অফিস সহায়ক ১০ টি পদের মধ্যে ৭ টি পদই খালি রয়েছে।
এতে বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত পাঠদান ও সুষ্ঠুব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষককেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার ২৩ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে ৪ জন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করায় ১৯ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দিয়ে ১০ টি উপজেলায় ১ হাজার ৩১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সুষ্ঠু তদারকির অভাবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে যথাসময়ে শিক্ষক উপস্থিতি না থাকা এবং নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়েই শেষ করতে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের পূর্বে জেলায় ৬৩০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ এবং দেশব্যাপি ১৫০০ বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩১ টি বিদ্যালয় নেত্রকোণায় স্থাপন করায় বর্তমানে ১৩১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ দান চলছে। ২০১৩ সালের পর বিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারী কাঠামো বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং পূর্বে কাঠামোর অর্ধেকের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে।
জেলার ১০ টি উপজেলায় ১ হাজার ৩১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১ হাজার ৩১৩ টি প্রধান শিক্ষকের পদ অনুমোদিত। একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ নাই। অনুমোদিত পদের মধ্যে ৮২৫ জন প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছে। বাকি ৪৮৮ টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে কার্যক্রম।
জেলার আটপাড়া উপজেলায় ১০৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬ টি বিদ্যালয়ে নাই প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তার পদটি রয়েছে শূন্য। ৪ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে রয়েছে ২ জন। উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী ও অফিস সহায়ক ছাড়াই চলছে আটপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম।
কলমাকান্দা উপজেলায় ১৭২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২১ টি বিদ্যালয়ে নাই প্রধান শিক্ষক, ৫ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২ জন। এছাড়াও হিসাব সহকারী ও অফিস সহায়ক পদ রয়েছে শূন্য।
কেন্দুয়া উপজেলায় ১৮২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৫ টি বিদ্যালয়ে নাই প্রধান শিক্ষক, ৭ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩ জন। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ২টি পদের মধ্যে ১টি, হিসাব সহকারী ও অফিস সহায়ক পদ রয়েছে শূন্য।
দুর্গাপুর উপজেলায় ১২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ৪ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে রয়েছে ২ জন। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ২টি পদের মধ্যে ১টি, হিসাব সহকারী পদ রয়েছে শূন্য।
বারহাট্টা উপজেলায় ১০৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৮ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ১ টি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ রয়েছে শূন্য। এছাড়াও উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহায়ক ও অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।
সদর উপজেলায় ২০১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩ টি বিদ্যালয়ে নাই প্রধান শিক্ষক। ৭ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩ জন। হিসাব সহকারীর পদ রয়েছে শূন্য।
পূর্বধলা উপজেলায় ১৭৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৫ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ৬ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩ জন। উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহায়ক ও অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।
মদন উপজেলায় ৯৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৩ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ অনুমোদিত। এরমধ্যে ৩১ টি পদই শূন্য। শিক্ষা কর্মকর্তার পদ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ১ টি পদ, উচ্চমান সহকারী ও অফিস সহায়কের পদ রয়েছে শূন্য।
মোহনগঞ্জ উপজেলার ৮৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০ টি বিদ্যালয়ে নাই প্রধান শিক্ষক। ৪ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে কর্মরত রয়েছে ২ জন। এছাড়াও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ২ টি পদই রয়েছে শূন্য।
খালিয়াজুরী উপজেলায় ৬৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য, ২ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১ জন। উচ্চমান সহকারী ও হিসাব সহকারীর পদ রয়েছে শূন্য। ১ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, ১ জন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ও ১ জন অফিস সহায়ক দিয়েই চলছে খালিয়াজুরী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, ২০১ টি বিদ্যালয় ৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার দিয়ে তদারকি করা সত্যিই অনেক কঠিন হয়ে যায়। শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত সহকারী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
পূর্বধলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান, ৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার থাকলেও ১ জন দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাজনিত কারণে অফিসে অনুপস্থিত। ২ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার দিয়ে ১৭৫ টি বিদ্যালয় তদারকি অত্যান্ত কঠিন। তারপরও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তদারকির চেষ্টা করা হয়।
কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মির্জা মোঃ সোহাগ বলেন, শিক্ষা অফিসারের পদ শূন্য, ৭ জন সহকারী শিক্ষা অফিসারের মধ্যে ৩ জন কর্মরত রয়েছেন। এমতাবস্থায় ১৮২ টি বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে তদারকি করা সম্ভব হয়না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন জানান, সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ প্রধান শিক্ষক হিসাবে পদন্নতির কার্যক্রম চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে ঊর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: