প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২৫, ১১:৪০
সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা হটলাইনে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় সীমান্ত ও অগ্রবর্তী এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উভয় পক্ষ গুলি ছোড়া ও আগ্রাসী আচরণ পরিহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংঘটিত যুদ্ধবিরতির পর এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম সামরিক যোগাযোগ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, উভয় পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা এমন একটি প্রতিশ্রুতি ঘিরে হয়েছে যে, কেউ কারও ওপর গুলি চালাবে না এবং কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেবে না।
এই অগ্রগতি শনিবারের যুদ্ধবিরতির পর এসেছে, যা পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক দিনের তীব্র লড়াইকে বিরতি দেয়।
গতরাতে কোনো বিস্ফোরণ বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার ছিল সাম্প্রতিক দিনগুলোর মধ্যে সীমান্তে প্রথম শান্তিপূর্ণ রাত।
শনিবারের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনয়ানুম মারসুস’ শুরু করে, যেখানে পাকিস্তানি বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাব দেয়া হয়। এতে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের ‘ফাতাহ’ সিরিজের দূরপাল্লার সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) সুনির্দিষ্ট গোলাবারুদ ব্যবহার করে ২৬টি ভারতীয় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে এমন সব স্থাপনাও ছিল, যেগুলো পাকিস্তানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হয়েছে কিংবা পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়ানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
পাকিস্তান ও ভারতের নেতারা এই যুদ্ধবিরতিতে অটল ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, বাণিজ্য ছিল এই সংঘর্ষ বন্ধের বড় একটি কারণ।
ট্রাম্প বলেন, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক বাণিজ্য করতে যাচ্ছি... ভারতের সঙ্গেও। আমরা এখন ভারতের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছি। শিগগিরই পাকিস্তানের সঙ্গেও আলোচনা করবো।
যেখানে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, সেখানে ভারত, যা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে আপত্তি জানিয়ে থাকে, এখনো ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-নিউজ১৮ জানিয়েছে, এই সামরিক আলোচনায় যুদ্ধবিরতি কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থগিত এবং সীমান্ত বন্ধসহ বিদ্যমান বিধিনিষেধগুলো এখনো বহাল রয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে, দুই দেশের ডিজিএমও পর্যায়ে হটলাইনে প্রথম দফার আলোচনা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এই আলোচনার বিস্তারিত শিগগিরই জানানো হবে।
উল্লেখ্য, এই সামরিক উত্তেজনা শুরু হয়েছিল গত মাসে ভারতীয় অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে একটি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে।
ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। পাকিস্তানের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে সেগুলো বেসামরিক এলাকা ছিল।
মন্তব্য করুন: