প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২৫, ১২:২৬
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও তার ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ সম্পত্তির পরিমাণ এক হাজার ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
সরকারি রেকর্ড অনুসারে, নয়টি ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে এনসিএ।
এই আদেশের ফলে আহমেদ শায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনের ওই সম্পত্তিগুলো বিক্রি করতে পারবেন না।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার মিত্রদের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যের সম্পদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তদন্তে এই দুজনের নাম উঠে আসে।
কোম্পানিজ হাউসের রেকর্ড অনুযায়ী, সমস্ত সম্পত্তি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান বা জার্সি-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা হয়েছে। সেগুলোর দাম ১ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত।
সম্পত্তিগুলোর মধ্যে একটি লন্ডনের অভিজাত ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ারের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। এটি ২০১০ সালে ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়। অপরটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসের একটি বাড়ি, যা ২০১১ সালে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়।
যুক্তরাজ্য নির্বাচন কমিশন (ইলেক্টোরাল রোল) রেকর্ড অনুযায়ী, গ্রেশাম গার্ডেন্সের ওই বাড়িতে বসবাস করতেন শেখ হাসিনার বোন এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা। তবে বর্তমানে তিনি সেখানে থাকেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমরা নিশ্চিত করছি যে, ১৭ গ্রসভেনর স্কয়ার এবং গ্রেশাম গার্ডেন্সের সম্পত্তির বিরুদ্ধে একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ ফ্রিজিং অর্ডার (সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ) সুরক্ষিত করেছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, সালমান এফ রহমান এবং আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান বাংলাদেশের চলমান অর্থ আত্মসাৎ তদন্তে সন্দেহভাজন তালিকায় রয়েছেন। নথি থেকে জানা যায়, এই সম্পত্তিগুলো আইল অব ম্যানের অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার এবং কালক্ষেপণ না করে সমস্ত বিতর্কিত সম্পদ জব্দ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ’
এনসিএ’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, এনসিএ চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ পেয়েছে। ’
লন্ডনে আহমেদ শায়ান রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের সম্পত্তি জব্দের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ বেক্সিমকোর আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল গার্ডিয়ান। তবে তাদের থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে অবশ্য আহমেদ শায়ান রহমানের একজন মুখপাত্র এফটি-কে বলেছিলেন, ‘আমাদের মক্কেল যেকোনো অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি অবশ্যই যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তকে সহায়তা করবেন। ’
গত বছর গার্ডিয়ান এবং প্রচারণা গোষ্ঠী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্তে লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে এবং ভাতিজার সম্পত্তির কথা উঠে আসে, যেখানে শেখ হাসিনার মিত্রদের মালিকানাধীন ৪০০ মিলিয়ন মূল্যের সম্পত্তি প্রকাশ পায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি সালমান এফ রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগের শাসনামলের সালমান এফ রহমান ছিলে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। গত বছর ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় পালানোর চেষ্টাকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মন্তব্য করুন: