বুধবার, ৪ঠা জুন ২০২৫, ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সব ধরনের চাকরির নিয়োগে বাধ্যতামূলক হচ্ছে এনআইডি
  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় উচ্চপর্যায়ের কমিটি হচ্ছে
  • বাস্তবমুখী মিত্যব্যয়ীতার বাজেট দেওয়া হয়েছে
  • ঈদে পরিবহনে ডাকাতি এড়াতে সবার ছবি তোলা হবে
  • ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি শেখ হাসিনা, ১৯ জুন চূড়ান্ত শুনানি
  • জুলাই সনদে কী থাকবে তা এখনই নির্ধারণ করতে হবে
  • নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান
  • সন্ধ্যার মধ্যে যেসব অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়ার আভাস
  • ডিসেম্বরে চালু রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, নেপাল থেকেও আসছে ৪০ মেগাওয়াট
  • বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য থাকছে যেসব সুবিধা

মাভাবিপ্রবির শাহজামান দীঘি অবৈধ দখল মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিজয় সরকার, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
২৫ মে ২০২৫, ১৬:৪২

‎টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত ঐতিহাসিক পীর শাহজামান দীঘির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। দীঘির ইতিহাস যেমন গৌরবোজ্জ্বল, তেমনি তার বর্তমান চিত্র উদ্বেগজনক। এ প্রেক্ষাপটে দীঘিটি সংরক্ষণ ও সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।

‎‎দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন শতাব্দী আগে, ১৬৬৮ সালে পীর শাহজামান (রহঃ) দীঘিটি খনন করান। পরবর্তীতে এটি সন্তোষ জমিদারের দখলে চলে গেলেও, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর উদ্যোগে এবং খোশনদপুর ওয়াকফের প্রমাণসহ আদালতে উপস্থাপনার মাধ্যমে দীঘিটি পুনরুদ্ধার হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে বিচারক মামলার রায় দেন মওলানা ভাসানীর পক্ষে, ফলে এটি আবার জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত হয়।

‎বর্তমানে এই ঐতিহাসিক দীঘিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর চারপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অননুমোদিত দোকানপাট। বিশেষ করে প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটক পর্যন্ত দীঘির দক্ষিণ সীমানায় খুঁটি ও বাঁশ পুঁতে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, যা একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দীঘির পানি ক্রমেই দূষিত হয়ে উঠছে। ফলে এ জলাধার যেমন পরিবেশগত ভারসাম্য হারাচ্ছে, তেমনি হারাতে বসেছে তার ঐতিহাসিক গৌরবও।

আজ ২৫ মে (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে ২য় গেট-১ম গেট হয়ে প্রত্যয় একাত্তরের সামনে এসে শেষ হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, "আমরা আমাদের স্থাপনাগুলো কিভাবে সুন্দর করা যায় সেবিষয়গুলো দেখছি। শিক্ষার্থী এই দাবিগুলোও আমরা দেখবো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।"

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো: ফোরকান হোসেন বলেন, "আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা রাখছি, মাননীয় ভিসি স্যারসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদের দীঘিটি সংস্কারে বিশেষ ভুমিকা পালন করবেন। আমরা চাই দীঘিটির দক্ষিণ পাশের দোকান পাটগুলো সরিয়ে এর চারপাশ বাধাই করে হাটার ব্যবস্থা করা এবং গাছপালা দিয়ে পরিবেষ্টিত করে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।"

সিপিএস বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান সাজু বলেন, "পীর শাহজামান দিঘি প্রায় ৩৫০ বছরের ঐতিহ্য ও স্মৃতি বহন করে। এলাকাবাসি সেই দিঘির পাশে অবৈধ দোকানপাট স্থাপন করেছে যা দিঘির সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে। দোকান গুলোর বর্জ্য সরাসরি দিঘিতে ফেলে দিঘির পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা চাই এই অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দিঘির সংস্কার করা হোক।

গণিত শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, "আজকের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী পীর শাহজামান দীঘীর সৌন্দর্যবর্ধন এবং দীঘির পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই দীঘিটি শুধু একটি জলাধার নয়, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, দীঘির আশেপাশে গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা, যা পরিবেশদূষণ এবং নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ঐতিহ্যবাহী এ দীঘির সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অন্যায় অবস্থা মেনে নিতে পারি না।"


‎স্মারকলিপিতে উল্লেখিত পাঁচ দফাগুলো:
‎১. দীঘির চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করে হাঁটার উপযোগী রাস্তা তৈরি।
‎২. প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ।
‎৩. দীঘির চারপাশে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।
‎৪. নির্দিষ্ট দূরত্বে একাধিক ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান স্থাপন।
‎৫. দীঘির পাশে একটি স্থায়ী প্রচারপত্র বা ফলক স্থাপন, যেখানে এর ইতিহাস ও গুরুত্ব সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হবে।

‎বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, পরিবেশ এবং নান্দনিকতা রক্ষায় এ ধরনের পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পীর শাহজামান দীঘি যেমন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও গৌরবও অটুট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সবাই।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর