প্রকাশিত:
৩ জুন ২০২৫, ১২:৫৬
বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ২০ দিন ধরে ডিএসসিসির নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন তার সমর্থকরা। এতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক সেবা।
মঙ্গলবার (০৩ জুন) সকাল ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, নগর ভবনের বাইরের ফটক বন্ধ। ভেতরের ফটকের সামনের সিঁড়িতে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ডিএসসিসির শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। এছাড়া ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে ২০ দিন ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ জরুরি কয়েকটি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সব কাজ বন্ধ। তবে ভেতরে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। সকাল থেকে ডিএসসিসির সেবাপ্রার্থী তেমন কাউকে দেখা যায়নি। আর ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীকে অলস সময় কাটাতে দেখা যায় নগর ভবনে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ মাস ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র নেই। ঢাকাবাসী নাগরিক সুবিধা যথাযথভাবে পাচ্ছে না। আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের মাধ্যমে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জোর করে তার ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। ইশরাক হোসেনকে শপথ পাঠ করানো ও মেয়রের দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাবু বলেন, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের পরও স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা করে ইশরাক হোসেনকে শপথ পাঠ করাচ্ছেন না। ঢাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা তিনি অনুধাবন করছেন না। আমরা চাই, দ্রুতই ইশরাক হোসেনকে শপথ পাঠ করিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিক।
আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, দুপুরে জনতার মেয়র ইশরাক হোসেন এসে জাতির সামনে কথা বলবেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী আমাদের করণীয় ঠিক করবো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ সংক্রান্ত আদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া ইশরাক হোসেনের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, ২৯ মে তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়, সে জন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওই দিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকেরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন। আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘শপথ না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে’ দায়ের করা রিট আবেদনটি ২২ মে সরাসরি খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী। আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়। সেই লিভ টু আপিলের শুনানি করে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) আপিল বিভাগ বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন। এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, নির্বাচন কমিশন এ ক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।
মন্তব্য করুন: