প্রকাশিত:
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:২৪
রাজবাড়ীতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ।
রোগীদের চিকিৎসার জন্য চাহিদা বেড়েছে এনএস এবং ডিএনএস স্যালাইনের। চাহিদা অনুসারে বাজারে সরবরাহ না থাকায় দেখা দিয়েছে এসব স্যালাইনের সংকট।
রাজবাড়ী শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের ফার্মেসিতে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না স্যালাইন। যেসব ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আবার একটির বেশি কিনতে পারছেন না রোগীর স্বজনরা। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্তসহ অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত বাজারে ওরিয়ন ফার্মা, পপুলার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, অপসো স্যালাইন, লিব্রা ইনফিউশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্যালাইন উৎপাদন করে। তবে বর্তমানে বাজারে এসব কোম্পানির স্যালাইন তেমন সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন ফার্মেসি প্রোপাইটারেরা।
সরেজমিনে রাজবাড়ী বড় বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসিতে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ক্রেতাই স্যালাইন কিনতে এসে ফিরছেন খালি হাতে। তবে হাসপাতাল গেট এলাকায় যে সব ফার্মেসি রয়েছে, সেখানে নির্ধারিত মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে স্যালাইন। তবে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে ৩১, পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪২, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জেলার সদর হাসপাতালে ১৮, পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন।
জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯০ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৬ জন।
রাজবাড়ী বড় বাজারে এনএস স্যালাইন কিনতে আসা সতজিৎ সাহা বলেন, আমার এক আত্মীয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার জন্য স্যালাইন কিনতে বাজারে এসে তিনটি ফার্মেসি ঘুরে পরে একটি পেয়েছি। আমার মতো অনেকেই স্যালাইনের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরছেন।
আরেক ক্রেতা মো. সজিব বলেন, আমার বাবা ডেঙ্গু জ্বরে জেলা সদর হাসপাতালে তিনদিন ধরে ভর্তি। স্যালাইন কিনতে বাজারে এসেছি। বেশির ভাগ ফার্মেসি বলছে তাদের সাপ্লাই নেই। আমরা সাধারণ জনগণ বিপাকে আছি।
আরেক ক্রেতা ছমিরুন বেগম বলেন, আমার স্বামী তিনদিন ধরে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি। স্যালাইন দিতে হচ্ছে। টাকা নিয়ে দোকানে গিয়ে ঘুরছি। এক প্যাকেটের বেশি বিক্রি করছে না।
রাজবাড়ী বাজারের মেসার্স সেন মেডিসিন সপের প্রোপাইটার বিজয় কুমার সেন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এর জন্য বেড়েছে স্যালাইনের চাহিদা। ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে আমরা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে অর্ডার দিলেও তারা চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন আমাদের সাপ্লাই দিচ্ছে না।
দীপ ফার্মেসির প্রোপাইটার দীপ সাহা বলেন, আমরা যে পরিমাণ অর্ডার দিচ্ছি সেই ভাবে কোম্পানি স্যালাইন দিচ্ছে না। অনেক ফার্মেসিতে স্যালাইন নেই। তাই ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল গেট এলাকার ফরিদা ফার্মেসির বিক্রেতা মো. মিদুল বলেন, আমরা ৩-৪ কেস স্যালাইন ওর্ডার দিলেও ৬-১০টি সাপ্লাই দিচ্ছে কোম্পানি। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের কাছে স্যালাইন বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি।
খান মেডিকেল হলের বিক্রেতা বলেন, আমরা কোম্পানির লোকদের বারবার বলছি বেশি করে স্যালাইন দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা চাহিদা মতো সাপ্লাই দিচ্ছে না। তাই রোগীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। দ্রুত স্যালাইনের সরবরাহ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) রাজবাড়ী জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি (সম্পাদক) মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান বলেন, জেলার প্রায় ২ হাজার ফার্মেসিকে জরুরি নোটিশে জানিয়েছি, কোনো অবস্থাতেই স্যালাইন, নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা সহায়ক পণ্যসামগ্রী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রয় করা যাবে না বা বেশি মূল্যে বিক্রয়ের উদ্দেশে গোপনে মজুদ করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করা যাবে না। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রয় করলে বা মজুদ করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ সাংগঠনিকভাবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন স্যালাইন তৈরিকারক কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যাতে বাজারে তারা চাহিদা মতো স্যালাইন সরবরাহ করেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. হান্নান বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীসহ অন্যান্য সব রোগীকে সাধ্য মতো চিকিৎসা, ওষুধ ও স্যালাইনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে স্যালাইন স্বল্পতা রয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিটোন বলেন, সারাদেশের মতো রাজবাড়ীতেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে কিটের কোনো সংকট নেই। তবে স্যালাইনের চাহিদা বেশি রয়েছে।
মন্তব্য করুন: