প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:২১
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ডাকঘর রয়েছে শুধুই সরকারি হিসাবের খাতায়, এ যেন কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ডাকঘরের কাজে নিয়োজিত পোস্টমাষ্টার, রানার সবাই আছে, নেই শুধু ডাকঘরের কার্যক্রম। প্রতিটি শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পরই বাধ্যতামূলক করতে হয় জন্ম নিবন্ধন। নিবন্ধনে নাম, পিতার নাম, মাতার নামের পাশে ডাকঘর লেখা বাধ্যতামূলক। জন্ম সনদ বা মৃত্যু সনদ বা ঠিকানায় ডাকঘর লেখা বাধ্যতামূলক হলেও বড়খাপন ডাকঘর বাস্তবে দৃশ্যমান নয়।
ইন্টারনেট-ইমেইলের যুগে যোগাযোগের জন্য মানুষ ডাকঘরের ওপর নির্ভর না করলেও সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, চাকুরি সংক্রান্ত চিঠিপত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো ডাকঘরের ওপরই নির্ভর করতে হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ এ অফিসে নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিয়োমিত সম্মানীভাতা উত্তোলন করলেও যথাযথ তদারকির অভাবে নিজেদের কাজে অনিহা ও গাফিলতির কারণে বিলুপ্তির দারপ্রান্তে বড়খাপন ডাকঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা।
জানা যায়, কলমাকান্দা উপজেলার বাঘসাত্রা গ্রামের মৃত আলী আকবরের পুত্র যাইনুল আবেদীনের ইসলামীব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ ফিল্ড সুপারভাইজার পদে নিয়োগপত্র এসেছিল বড়খাপন ডাকঘরের মাধ্যমে। ডাকঘরে নিয়োজিত কর্তা ব্যক্তির গাফিলতির কারণে নিয়োগপত্র পেলেও চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি জাইনুল আবেদীন। কারণ নিযোগপত্র হাতে পাওয়ার আগেই যোগদানের সময় সীমা শেষ। জাইনুল আবেদীনের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ ফিল্ড সুপারভাইজার পদে প্রাপ্ত নিয়োগপত্র সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর হেড অফ হিউম্যান রির্সোস মোঃ মোস্তফিজুর রহমান সিদ্দিকী’র ১৩ জুন ২০২৩ স্বাক্ষরিত নিয়োগ পত্রে ৬ জুলাই যোগদানের নির্দেশনা ছিল। নিয়োগপত্রটি ২১ জুন ২০২৩ তারিখে যাইনুল আবেদীনের নামে প্রধান ডাকঘর ঢাকা অফিসে ৫৩৬ নং রেজিষ্টিমূলে প্রেরণ করে। যাইনুল আবেদীনের নামে প্রেরিত রেজিষ্টিকৃত নিয়োগপত্রের চিঠিটি ১৩ আগষ্ট ২০২৩ সালে রানার ছুট্টু মিয়া তাকে পৌছে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে একটি পরিত্যাক্ত চালা ঘরের সামনে চিঠির বক্স ঝুলছে। চিঠির বক্স তালা বিহীন পরিত্যাক্ত। পাশের ঘরটির তালায় মরিচিকা ধরা, যেন বহুদিন খোলা হয়নি। স্থানীয় গোলাম রব্বানীর ছেলে ওবাইদুল ইসলাম জানান, পরিত্যাক্ত ঘরটির মালিক তার চাচা মিনহাসুর রহমান। তারা সবাই নেত্রকোণা বাসায় থাকেন। তারা মাঝে মাঝে বাড়িতে
বেড়াতে আসেন। তার চাচা মিনহাসুর রহমান এই ডাকঘরের পোস্টমাষ্টার। ছুট্টু মিয়া নামে একজন রানার ডাকঘরের কাজকর্ম করে থাকে।
বড়খাপন ডাকঘরের পোস্টমাষ্টার মিনহাসুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি।
যাইনুল আবেদীন জানান, পোস্টমাষ্টার মিনহাসুর রহমানের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে আমি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পোস্টমাষ্টার মিনহাসুর রহমানের দায়িত্বে গাফিলতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রতিকার চেয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ডেপুটি পোস্টমাষ্টার জেনারেল বরাবর লিখিত অভিযোগ
দিয়েছেন। এছাড়াও পোস্টমাষ্টার মিনহাসুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে ডাকঘর পরিচালনার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও পোস্টমাষ্টার মিনহাসুর রহমান সেটি ব্যবহার করেন না। ফলেযাইনুলের মতো অনেকেই ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে।
নেত্রকোণা প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাষ্টার শাহেদুন্নাহার জানান, মিনহাসুর রহমানের পিতা বড়খাপন ডাকঘরের পোস্টমাষ্টার ছিলেন। পিতার পর পুত্র এখন পোস্টমাষ্টার। মিনহাসুর রহমানের দায়িত্ব পালনের গাফিলতির বিষয়ে তিনি অবগত। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন: