প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৭
ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণসহ অন্যান্য ঘটনা প্রবাহ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে আওয়ামী লীগ। আর এ বিষয়গুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের সামনে রেখে আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছে সরকার ও দলটির নীতিনির্ধারকরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অবস্থান নিয়ে দেশের রাজনীতিতে আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। এই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান কোন দিকে সেই বিষয়টি। আলোচনায় রয়েছে মার্কিন ভিসা নীতিসহ দেশটির কিছু পদক্ষেপের বিষয়ও। তবে জি-২০ সম্মেলনের ঘটনা প্রবাহ পরিস্থিতি বদলে গেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে এর একটা বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছ বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
আগামী নির্বাচনে ভারতের অবস্থান কি হবে এ বিষয় নিয়ে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই একটা আলোচনা রয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুষ্ঠিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো কোনো দিক থেকে সমালোচনা ও বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয় এবং সরকারকে সমর্থন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ভারতের এই সমর্থন অব্যাহত আছে বলেই আওয়ামী লীগ মনে করে। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জি-২০ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এবং অংশ নিয়েছেন। এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই তাকে এ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সম্মেলনে জো বাইডেন, ঋষি সুনাক, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ অনেক বড় বড় নেতা এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এসেছিলেন কিন্তু ফোকাস ছিলেন দুইজন, নরেন্দ্র মোদি আর শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা যে কত উচ্চতায় নিয়ে গেছেন জি-২০ এর মধ্য দিয়ে তা দেশের মানুষই শুধু নয় বিশ্বও দেখলো। নির্বাচন ইস্যুতে অবশ্যই ইতিবাচক দিক হিসেবে প্রভাব ফেলবে এই বিষয়গুলো।
সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দল ও সরকারের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সফলতা বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সাক্ষাতের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেন সেলফি তোলেন। এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি ইতিবাচক ওই নেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সুসম্পর্ক উন্নয়নের প্রকাশ। পাশাপাশি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঞোঁ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফর বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমর্থনেরই বহির্প্রকাশ। এসব কিছুই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতা কাটাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে আওয়ামী লীগ ওই নেতারা জানান।
এদিকে আগামী নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ভারতের অবস্থানও আগের মতোই অব্যাহত আছে বলেও মনে করছেন তারা। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বেই বাংলাদেশকে চায় ভারত। অতীতের মতো আগামীতেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারতের সমর্থন ও সাহায্যের অঙ্গীকার শেখ হাসিনা সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজী জাফরউল্ললাহ বলেন, এই সব ঘটনায় যে নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তা তো ইতোমধ্যেই বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপির গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে হাওয়া বেরিয়ে গেছে। বিএনপি ভেবেছিল ওবামা, হিলারি ক্লিনটনদেরকে ধরে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু সেই আশা আর নেই। একটা ইঙ্গিত পাচ্ছি যে নির্বাচন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়, এতে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। ভারতের কাছ থেকেও হয় তো জানতে পেরেছে যে শেখ হাসিনার সরকার সঠিকভাবেই দেশ পরিচালনা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা ঠিক রাখতে হলে নতুন কাউকে আনা ঠিক হবে না, ভারত এটা তাদেরকে বলে দিয়েছে। তারা বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন তোমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। ভোট করো, জনপ্রিয়তা থাকলে জিতে আসো।
মন্তব্য করুন: