প্রকাশিত:
৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৬:৫৪
মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর পর এখন চীফ সায়েন্টিফিক অফিসারের পদ থেকেও পদত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ড. মালা খান। মালা খান বিআরআ্ইসিএম এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকল ষড়যন্ত্র যখন একে একে ব্যর্থ হয়েছে তখন নতুন করে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগের দাবি তোলা হচ্ছে। অফিস থেকে বরখান্তের দাবি তোলা হচ্ছে। এর বাইরে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা হচ্ছে।
ড. মালা খান অভিযোগ করে বলেন, এত সবের পেছনে মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করা। এখানকার ল্যাবে টেষ্ট বন্ধ রয়েছে। যেসব টেষ্ট বন্ধ রয়েছে সেগুলো পার্শবর্তী দেশে নিয়ে করা হবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। এর পেছনে একটি শক্তিশালী চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ডিআরইউ সাগর রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মালা খান এসব অভিযোগ করেন।
ড. মালা খান তার বিরুদ্ধে আনা নানান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তার বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রী ভুয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে অভিযোগ ওঠে। এরপর তদন্ত হয়। হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে রায়ে আমি জয়লাভ করি। পিএইচডি ডিগ্রীর বিষয়টি একটি মিমাংসিত ইস্যু। এরপরেও নতুন করে পুরনো জিনিস বারবার সামনে নিয়ে আসছে চক্রটি। আমি যে বিষয়ে পিএইচডি করেছি সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি ৮ তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। সেটি দৃশ্যমান ডিগ্রীর ফসল।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। যার মোট টাকার পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু বলা হচ্ছে আমি নাকি হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছি। প্রকল্প চলাকারীন ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সিআইডি তদন্ত করেছে। মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে কিন্তু কেউ দোষী সাবস্ত করতে পারেনি। কারন দেখা গেছে, আসলে অভিযোগ উঠেছিল মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।
সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে ড. মালা খান বলেন, মশিউর রহমান ২০২০ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তার রাজনৈতিক পরিচয় কি তাও জানি না। তিনি একজন জুনিয়র কর্মকর্তা। সুতরাং তার সাথে আমার কোনো বিরোধ থাকার প্রশ্নই আসে না। তাকে গত ২৩ জানুয়ারি ফৌজদারি অপরাধে থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে লাগা চক্রটি অভিযোগ করছেন, মশিউরকে নাকি আমি অপহরণ করেছি। মশিউর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন সেটা তার বন্ধুরা ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। যেখানে নতুন করে একজন মহাপরিচালক আছে, যেখানে আমি অফিসে যেতে পারছি না। সেখানে আমার কথায় কি আইন আর পুলিশ চলে নাকি? মুলত অপহরণ আর গুমের অভিযোগ তুলে সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। পারিবারিকভাবে আমি নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি। আমি আমার ও পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাই।
মালা খান অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের ১২ আগস্ট মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ল্যাব ও অফিসের চাবি আন্দোলনরত চক্রটির সদস্যরা দখলে নিয়েছে। গত দুই মাস ধরে অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি। তারা নানা সময় আমার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল ফাইলপত্র ঘাটাঘাটি করেছে। সেখান থেকে কাগজপত্র নিয়েছে। অনেক কনফিডেন্সিয়াল ডকুমেন্ট বাইরে সরবরাহ করেছে। এমনকি তারা ডকুমেন্ট টেম্পারিংও করেছে। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং থানায় জিডি করেছি। সেসব কাগজ দিয়ে নানান জায়গায় অভিযোগ করছে এবং ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি জানতে চাই, যারা অফিস তালা মেরে আন্দোলন করছে, তারা কি মাসের বেতন তোলা বন্ধ করেছেন? যারা জনগণের সেবাকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারা কোন পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ?
ড. মালা খান বিআরআইসিএম নানান দিক তুলে ধরে বলেন, সেই যে প্রথম ডিআরআইসিএম নামে বিসিএসআইআরের আওতায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা শুরু করেন মালা খান, চক্রান্তের শুরু। বিসিএসআইআরের কিছু বিজ্ঞানী এটা হতে দিবেন না। বিআরআইসিএম প্রতিষ্ঠিত হলে অসুবিধা অনেকের। এনালিটিক্যাল টেস্টের ক্ষেত্রে যে অরাজকতা আছে, একই টেস্টের ল্যাব ভেদে ভিন্নভিন্ন রেজাল্ট, ভুল রেজাল্ট, দেশের বাইরে এই টেস্টের গ্রহণযোগ্যতা না থাকা - এসব অসুবিধা দূর করতে সহায়তা দান এবং আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং সেবা প্রদান করার লক্ষ্যেই বিআরআইসিএম প্রতিষ্ঠা করেছেন মালা খান। এতে কাদের অসুবিধা, সকলেই বোঝেন। স্বার্থান্বেষী মহলের পাহাড় সমান বিরোধিতা, চক্রান্ত পার করে যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেলো বিআরআইসিএম, চক্রান্তকারীদের তখন মাথায় হাত। তারা বোঝেন, মালা খানই এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণভোমরা। তাকে হটাতে পারলেই ধ্বংস করা যাবে এই প্রতিষ্ঠান। চক্রান্তের মূল বিষয়টি না বুঝেই মালা খানকে হটানোর নোংরা খেলায় সামিল হয়েছেন বিআরআইসিএমেরই কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন বিজ্ঞানী-কর্মচারী।
বাংলাদেশে কেমিক্যাল মেট্রোলজি: মালা খানের যতো চ্যালেঞ্জ
কেমিক্যাল মেট্রোলজি - দ্য সায়েন্স অফ কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্ তথা রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের একটি নতুন ক্ষেত্র। কেমিক্যাল মেট্রোলজির ব্যবহার অনাদিকালের। কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রাতিষ্ঠানিক, টেকনিক্যাল ও আইনী অবকাঠামো না থাকায় এর ব্যবহার সুসংহত, যথাযথ ছিলো না। আন্তর্জাতিক মানের তো নয়ই। দেশে এই বিষয়টির প্রচলন করেছেন মালা খান। প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো সৃষ্টি করেছেন বিআরআইসিএম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। কোনোকোনো মেধাবী পণ্ডিত বিজ্ঞানী মালা খানের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সবশেষ তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা যত অভিযোগ রয়েছে তা তদন্তের জন্য উম্মুক্তভাবে আহবান করছি। তদন্তে আমি দোষী সাবস্ত হলে আমি মাথা পেতে নিবো। তবে তদন্তের আগেই আমাকে দোষী সাবস্ত করে শাস্তি দেওয়া মোটেও আইনী কাঠামোয় পড়ে না। আর যারা আন্দোলন করছেন তারা না বুঝেই কোনো চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলন করছেন এবং দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন: