প্রকাশিত:
২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৩৯
লক্ষ্মীপুরে পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদিরের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও গ্রাহক হয়রানির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন অফিসের কর্মচারীরা। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ লোক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদির এর আগে চাঁদপুরে কর্মরত অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। মিটার চেকের নামে তিনি তখন তাদের কাছ থেকে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এনিয়ে তখন একাধিক গ্রাহক তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে বদলি হয়ে তিনি লক্ষ্মীপুরে এসে একই কাজ করছেন। মিটার চেকের নামে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নাজেহাল করছেন এই মোকতাদির।
মোকতাদিরের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও গ্রাহক হয়রানির কথা জানলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ নিচ্ছেন না নির্বাহী প্রকৌশলী। এতে ক্রমেই তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীরাসহ বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
দ্রুত লক্ষ্মীপুর পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদিরকে এই অফিস থেকে বদলি করা না হলে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে মোকতাদির নিজেই ষুষ গ্রহণের কথা শিকার করেছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ ও একাধিক কর্মচারী সূত্র জানায়, যোগদানের পর থেকেই গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার যেন তার নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মিটার পরিবর্তন গ্রাহকদের অধিকার। আর এ কাজে তাদের সহায়তা করা অফিসের সকলের দায়িত্ব। তিনি টাকা ঘুষ না দিলে পোস্টপেইড মিটার পরিবর্তনের কাজ করেন না। গ্রাহকরা তার থেকে মিটার না নিলে তিনি মিটার প্রত্যাখ্যান করেন। টাকার বিনিময়ে মিটার পরিবর্তন তার আরেকটি ব্যবসা। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন বন্ধ থাকলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিটার পরিবর্তন করছেন। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজে তিনি নানা কারিশমা দেখান। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর তিনি গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ঘুষ পেলে জরিমানা কমিয়ে দেন। নাহলে মনগড়া বিল করেন।
এদিকে দুপুরের খাবার খেতে বাসায় গেলে মোকতাদির অফিসে আসেন বিকেল ৪টায়। বিলম্বের বিষয়ে কেউ কিছু বললে তিনি বলেন, কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে তিনি রাজি না। তার দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন দপ্তরের স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদির নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাঁদপুরে ৬ বছর কর্মরত ছিলেম। চাঁদপুরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি গ্রাহকদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এসব হয়রানির শিকার ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। পরবর্তীতে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে লক্ষ্মীপুরে বদলি করা হয়। লক্ষ্মীপুরে এসেও তিনি আগের মতোই স্বৈরাচারী কায়দায় বেঁচে বেঁচে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু করেছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী বলেন, মোকতাদির ঘুষ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। আমরা উনার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। স্থানীয় গ্রাহকদের জিম্মি করে তিনি বাণিজ্য করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদিরের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও গ্রাহক হয়রানির কথা খোদ পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোনোই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। অভিযোগ রয়েছে উপরে উপরে তিনি এগুলোর বিরুদ্ধে হলেও, তিনি নিজেই এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। কার্যালয়টির ভিতরে ও বাহিরে নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একাধিক সিন্ডিকেট কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত এই সিন্ডিকেটই পুরো কার্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঘুষ বাণিজ্যের কথা শিকার করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকতাদির বলেন, সব ফাইল থেকে টাকা খায় না। কিছু কিছু ফাইল থেকে টাকা নি। আমি কতৃপক্ষের নির্দেশেই কাজ করি। আমার কাজ সম্পর্কে কতৃপক্ষ অবগত আছে। আমাকে বদলির কথা বলে লাভ নেই। যেখানেই যাই আমার জন্য চেয়ার বরাদ্দ থাকবে।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবির) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌ: হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ বলেন, কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ না আসলে আমি জানবো কী করে যে অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন: