শনিবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৫, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • গরমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে
  • শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি নয়, ন্যায় ও পরিবেশ রক্ষার দায়বদ্ধতা
  • আমরা দ্রুততার সঙ্গে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে চাই
  • এবার বিপিএম-পিপিএম পদক পাচ্ছেন ৬২ পুলিশ সদস্য
  • রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • কেউ যাতে নিপীড়নের মুখে না পড়ে এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই
  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জামায়াত
  • পোপকে শ্রদ্ধা জানাতে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রধান উপদেষ্টা
  • আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন
  • বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশ

রমজানে ঘর ইবাদতময় করবেন যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৬ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৬

রমজানুল মোবারক এমন একটি মাস, যার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত , সুপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা, ১৮৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি, মুসলিম) এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ,শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। তাই আমাদের উচিত এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানো , ঘরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে ইবাদত সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে।

ঘরে ইবাদতের পরিবেশ তৈরির উপায় সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হবে। প্রথমত ঘরে নামাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা। নামাজ ঘরের ইবাদতের মূল ভিত্তি। ঘরের এক কোণ বা নির্দিষ্ট একটি জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে সবসময় জায়নামাজ, তসবিহ, ও কুরআন শরিফ রাখা থাকবে। এই স্থানটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে নামাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ ঘরে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তেন , সাহাবাদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন,তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ো না (অর্থাৎ নামাজবিহীন রেখো না)। (সহিহ মুসলিম)

ঘরে কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা। রমজান মাস কুরআনের মাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে পুরো কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসিরের আলোচনা করা।

ঘরে ইফতার ও সাহরির সময় দোয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইফতার ও সাহরির সময় পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসা সুন্নাত। এ সময় দোয়ার মাধ্যমে ইফতার করা, কুরআন তিলাওয়াত শোনা , আল্লাহর প্রশংসা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রসsলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় এই দোয়া পড়তেন,

اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ (হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি , তোমারই দেওয়া রিজিকে ইফতার করছি।

নিজের পরিবারকে ইসলামি শিক্ষায় উৎসাহিত করা। রমজানে আমাদের দায়িত্ব শুধু নিজের ইবাদত করা নয়, বরং পরিবারের সবাইকে ইসলামের পথে পরিচালিত করা। শিশুদের ছোট ছোট দোয়া, কুরআনের সূরা , ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে।

ঘরের কর্তাকেই আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে, কেনো সন্তান, স্ত্রীকে কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়নি। আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যেনো লজ্জিত হতে না হয়। আমাদের সন্তান যেনো কাল কিয়ামতের দিন আমাদের সম্পর্কে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করতে না পারে, এ কথা বলতে না পারে, আমার বাবা আমাকে কখনই নামাজের কথা বলেনি, কখনোই কোরআন তিলাওয়াতের কথা বলেনি, আমাকে কোরআন শিক্ষা দেয়নি। আপনার সন্তান আল্লাহকে বলবে,

হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামে দেয়ার আগে আমার বাবাকে জাহান্নামে দেন। তিনি যদি শেখাতেন আমি দীন শিখতে পারতাম। দীনের পথে চলতে পারতাম। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের যেনো পরতে না হয়। আমাদের যেনো আফসোস করতে না হয়।

রমাজনে আমাদের উচিত পরিবারে দান-সদকার পরিবেশ সৃষ্টি করা। রমজানে দান-সদকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) এ মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। তিনি বলেছেন,রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। (বুখারি) সাহাবিরা নিজেদের সম্পদের বিশাল অংশ দান করতেন। তাই আমাদের উচিত গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা , পরিবারের সদস্যদের দান করতে উদ্বুদ্ধ করা।

ঘরে গুনাহমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। ইবাদতের পরিবেশ তখনই সুসংগঠিত হবে, যখন ঘরকে গুনাহ থেকে মুক্ত রাখা যাবে। তাই রমজানে বিশেষ করে খারাপ কথাবার্তা, গিবত, মিথ্যা, অনর্থক কথা বলা ও সময় অপচয়কারী কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজে লিপ্ত হওয়া বর্জন করল না, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই যে সে শুধু পানাহার ত্যাগ করল। (বুখারি) তাই আমাদের ঘরকে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে , সকল অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইবাদতের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। ঘরে ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারিবারিকভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন, কে সবচেয়ে বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে? কে বেশি বেশি দান করতে পারবে?কে সবচেয়ে সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে পারবে?

এতে পরিবারের প্রতিটি সদস্য ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত হবে , একটি সুন্দর দ্বীনি পরিবেশ গড়ে উঠবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সৎকর্মে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করো। (সূরা আল-মায়েদা, ৪৮) রমজান হলো জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার মাস। তাই এই সময়টাকে পুরো পরিবার একসঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে কাটালে বরকতও বেশি হবে , সম্পর্কেও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।

ঘরে রাতের ইবাদতকে জীবন্ত করতে হবে। রমজানের রাতগুলো ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ, ইস্তিগফার ও দোয়ার পরিবেশ তৈরি করা উচিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (তারাবি, তাহাজ্জুদ) আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম)

রমজান মাস আমাদের জন্য আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে কাটানো উচিত। ঘরে যদি আমরা ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে পুরো পরিবার এই বরকতপূর্ণ সময়ের ফায়দা নিতে পারবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের দেখানো পথ অনুসরণ করাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদের ঘরগুলোকে ইবাদতের কেন্দ্র বানিয়ে দিন , এই রমজানকে আমাদের জন্য মাগফিরাত ও নাজাতের মাধ্যম করুন। আমিন!



মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর